
কলকাতার ময়দানে এখন গুঞ্জনের কেন্দ্রবিন্দু মুম্বাই সিটি এফসি’র প্রতিরক্ষার শক্তিশালী স্তম্ভ মেহতাব সিং (Mehtab Singh)। আইল্যান্ডার্সদের সঙ্গে মেহতাবের চুক্তির আরও এক বছর বাকি থাকলেও, কলকাতার দুই ফুটবল জায়ান্ট—মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং ইস্টবেঙ্গল এফসি—আগামী মরশুমে তাদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে এই ২৫ বছর বয়সী ডিফেন্ডারকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গত গ্রীষ্মে লালেংমাওয়িয়া রাল্টে (আপুইয়া)-র ট্রান্সফার নিয়ে যেমন এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মুখোমুখি হয়েছিল। তেমনই মেহতাবকে কেন্দ্র করে এবারও একই রকম তীব্র প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে মেহতাব ধারাবাহিকভাবে নিজের জাত চিনিয়েছেন। সেন্টার-ব্যাক এবং রাইট-ব্যাক—দুই পজিশনেই তার সমান দক্ষতা তাকে ট্রান্সফার মার্কেটে আরও মূল্যবান করে তুলেছে। মোহনবাগান মেহতাবকে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাকআপ হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে টম অলড্রেডের চুক্তি নবায়নের পর তাদের চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ জুটি অক্ষত থাকায়। মোহনবাগানে হয়তো মেহতাব প্রথম একাদশে সরাসরি জায়গা পাবেন না, তবে তার অভিজ্ঞতা এবং অভিযোজন ক্ষমতা তাকে প্রয়োজনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য আদর্শ প্রার্থী করে।
অন্যদিকে, গত মরশুমে প্রতিরক্ষায় দুর্বলতায় ভুগতে থাকা ইস্টবেঙ্গল মেহতাবকে তাদের ডিফেন্সের মূল স্তম্ভ হিসেবে পেতে মরিয়া। আনোয়ার আলির গত এক বছরের চোট-সমস্যার কারণে লাল-হলুদ ব্রিগেডের প্রতিরক্ষায় নির্ভরযোগ্য শক্তির প্রয়োজন। আনোয়ার এবং মেহতাব যদি ফিট থাকেন। তবে ইস্টবেঙ্গল একটি শক্তিশালী ভারতীয় প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারবে, যা তাদের আক্রমণে আরও বিদেশি খেলোয়াড় ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে।
মেহতাব বর্তমানে ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিভাদের একজন। বল-প্লেয়িং ডিফেন্ডার হিসেবে তিনি দুই পায়ে সমান দক্ষ, পিছন থেকে আক্রমণ তৈরিতে অবদান রাখতে পারেন, চাপের মুখে স্থির থাকেন এবং সেট-পিসে প্রতিপক্ষের বক্সে হুমকি হয়ে ওঠেন। এই গুণাবলী তাকে যেকোনো শিরোপা-লড়াকু দলের জন্য আদর্শ পছন্দ করে।
মুম্বাই সিটি এফসি’তে মেহতাব আইএসএল শিল্ড এবং কাপ—দুটোই জিতেছেন। তবে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে তার একটি আবেগঘন যোগাযোগ রয়েছে। তিনি ইস্টবেঙ্গলের অ্যাকাডেমির প্রোডাক্ট এবং কোয়েস ইস্টবেঙ্গলের সময়ে সিনিয়র দলে প্রথম উঠে আসেন। গোকুলাম কেরালায় একটি লোন স্পেলের পর তিনি মুম্বাইয়ে তার সফল যাত্রা শুরু করেন।
ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কিংবদন্তি আলভিটো ডি’কুনহা, মেহতাবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন, বিশ্বাস করেন যে এই ডিফেন্ডার দলে যোগ দিলে দলের শক্তি বাড়বে। আলভিটো বলেন “মেহতাব যদি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে সই করেন, তবে আমাদের প্রতিরক্ষা নিঃসন্দেহে শক্তিশালী হবে।” তিনি আরও বলেন “আনোয়ার এবং মেহতাব একটি দুর্দান্ত জুটি গড়ে তুলতে পারেন। তাদের উপস্থিতি আমাদের আক্রমণে আরও বিদেশি খেলোয়াড় ব্যবহারের সুযোগ দেবে। মেহতাবের মতো একজন খেলোয়াড় দলকে অবশ্যই শক্তিশালী করবে।”
মেহতাব মুম্বাই সিটি এফসি’তে থাকবেন, যেখানে তিনি ইতিমধ্যেই নিজের নাম করেছেন, নাকি ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে তার শিকড়ে ফিরবেন—তা এখনও দেখার বিষয়। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত: তার পরবর্তী পদক্ষেপ ভারতীয় ফুটবলের তীব্রতম প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।