কলকাতা ফুটবল লিগে ভূমিপুত্র ইস্যুতে এই সিদ্ধান্তের পথে IFA

২০২৫ মরসুম থেকে কলকাতা ফুটবল লিগে (CFL) নতুন নিয়ম চালু করতে চলেছে ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (IFA)। প্রতিটি দলের একাদশে সাতজন ভূমিপুত্র ফুটবলার (Bhumiputra Footballer) খেলানো বাধ্যতামূলক হবে, বাকি চারজন হতে পারবেন ভিনরাজ্যের খেলোয়াড়। এই পরিকল্পনার কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত। সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি জানান, বাংলার ফুটবলের উন্নতির স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তবে, এই নিয়ম এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়নি এবং ভাবনার স্তরেই রয়েছে। আইএফএ জানিয়েছে, লিগে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আগামী জুন মাস থেকে কলকাতা লিগ শুরু হবে। তার আগে ক্লাবগুলো দল গঠনের জন্য যথেষ্ট সময় পাবে। গত দুই মরসুম ধরে কলকাতা লিগে বিদেশি ফুটবলারদের খেলানো বন্ধ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে, একাদশে চারজন ভূমিপুত্র এবং সাতজন ভিনরাজ্যের খেলোয়াড় খেলানোর নিয়ম চালু ছিল। আগামী মরসুম থেকে এই অনুপাত বদলে সাতজন ভূমিপুত্র এবং চারজন ভিনরাজ্যের খেলোয়াড়ের নিয়ম চালু হতে চলেছে। আইএফএ জানিয়েছে, এই নিয়ম চালু করলেও প্রতিযোগিতার মানের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। স্থানীয় প্রতিভার বিকাশের পাশাপাশি লিগের মান বজায় রাখা তাদের লক্ষ্য।

ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে কলকাতা লিগে পুরোপুরি ভূমিপুত্র ফুটবলারদের খেলানোর পক্ষে কথা বলে আসছেন। তবে, অনির্বাণ দত্ত জানিয়েছেন, প্রতিযোগিতার মান ধরে রাখতে এই নিয়ম পুরোপুরি কার্যকর করা কঠিন। তিনি স্পষ্ট করেছেন, ভূমিপুত্র বলতে শুধু বাঙালি ফুটবলার নয়, যাঁরা বাংলায় জন্মেছেন বা দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছেন, তাঁরাও এই বিভাগে গণ্য হবেন। ভূমিপুত্র প্রমাণের ক্ষেত্রে আধার কার্ড বা অন্যান্য নথি জমা দিতে হবে। তবে, আধার কার্ড জালিয়াতির মতো অসাধু উপায় অবলম্বন করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ম কঠোরভাবে পালন করা হবে, যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।

এদিকে, নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করতে আইএফএ স্কুলস্তরে ফুটবল প্রতিযোগিতা ‘সুপ্রিম কাপ’ আয়োজন করতে চলেছে। এই টুর্নামেন্টের জন্য একটি লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। আইএফএ সচিব জানিয়েছেন, এটি অনূর্ধ্ব-১৪ বয়সিদের জন্য স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট। আগামী মাস থেকে এই প্রতিযোগিতা শুরু হবে। তিনি বলেন, “রাজ্যের প্রতিটি জেলার ক্রীড়া সংস্থা আটটি স্কুল বেছে নেবে। প্রথমে জেলাস্তরে প্রতিযোগিতা হবে। সফল স্কুলগুলো জেলাভিত্তিক পর্বে অংশ নেবে। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে।” এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে তরুণ ফুটবলারদের প্রতিভা চিহ্নিত করে তাদের উৎসাহিত করাই আইএফএ-র লক্ষ্য।

কলকাতা লিগের নতুন নিয়ম বাংলার ফুটবলের জন্য একটি নতুন দিশা দেখাতে পারে। স্থানীয় খেলোয়াড়দের বেশি সুযোগ দেওয়ার এই উদ্যোগ বাংলার ফুটবলের মূল থেকে নতুন প্রতিভা তুলে আনতে সাহায্য করবে। তবে, ভিনরাজ্যের খেলোয়াড়দেরও সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিযোগিতার মান বজায় রাখার ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। গত কয়েক বছরে সিএফএল-এর গৌরব ফিরিয়ে আনতে আইএফএ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৪-২৫ মরসুমে ২৬টি দল দুটি গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যা লিগের প্রতিযোগিতামূলক চরিত্র বাড়িয়েছে।

সুপ্রিম কাপের মতো উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে। জেলাস্তর থেকে রাজ্যস্তরে এই প্রতিযোগিতা তরুণ ফুটবলারদের জন্য একটি বড় মঞ্চ হতে পারে। আইএফএর এই পদক্ষেপগুলো বাংলার ফুটবলকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে, নিয়ম কার্যকর করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং কঠোর তদারকি নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে কোনো অনিয়ম না ঘটে। ফুটবলপ্রেমীরা এখন অপেক্ষায় আছেন, কীভাবে এই নতুন নিয়ম এবং সুপ্রিম কাপ বাংলার ফুটবলের ভবিষ্যৎ গঠন করে।

  • Related Posts

    হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে আজহারউদ্দিনের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ

    হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উত্তর প্যাভিলিয়ন স্ট্যান্ড থেকে প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিনের (Mohammad Azharuddin) নাম মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা…

    আরসিবির একাদশে বড় রদবদল, ‘বিগ হিটার’ লিভিংস্টোনের জায়গায় কেন শেফার্ড?

    আইপিএল ২০২৫-এর একটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB ) পাঞ্জাব কিংসের (Punjab Kings) মুখোমুখি হয়েছে। গত ম্যাচে পাঞ্জাবের কাছে লজ্জাজনক হারের পর আরসিবি-র জন্য…