Technology in Sports: ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে কলকাতায় আলোচনায় গোপীচাঁদ-অঞ্জু ববিরা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI in Sports) থেকে অগমেন্টেড রিয়েলিটি—আধুনিক ক্রীড়া জগতে প্রযুক্তির (Technology in Sports) প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে। প্রযুক্তি এখন ক্রীড়ার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। রেভস্পোর্টজ আয়োজিত টাটা স্টিল ট্রেইলব্লেজার্স ক্রীড়া সম্মেলনের এই অধিবেশনটির বিষয় ছিল ‘ক্রীড়ায় প্রযুক্তি’। এই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন ভারতের প্রধান ব্যাডমিন্টন কোচ পুল্লেলা গোপীচাঁদ, লং জাম্পে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ব্রোঞ্জ পদকজয়ী অঞ্জু ববি জর্জ, স্কোয়াশ তারকা সৌরভ ঘোষাল, শ্যুটার ও শুটিং কোচ জয়দীপ কর্মকার এবং ডব্লিউটি ভিশনের ডিরেক্টর দিব্যজোত আহলুওয়ালিয়া।

প্রযুক্তির প্রভাব
ডব্লিউটি ভিশনের দিব্যজোত আহলুওয়ালিয়া বলেন, “এআই এখন সবচেয়ে আলোচিত শব্দ। অগমেন্টেড রিয়েলিটি ক্রীড়ায় ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। এটি ক্ষমতা বাড়ায়। এতে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে এবং এটি ভালোভাবে কাজ করছে। প্রশ্ন হলো, এটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে। তবে এটি পারফরম্যান্সে সাহায্য করে। খেলোয়াড়রা এটি ব্যবহার করে আরও ভালো হচ্ছেন। আগামী দিনে এটি আরও বেশি শোনা যাবে।” তিনি জানান, প্রযুক্তি ক্রীড়ায় একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে, যা খেলোয়াড়দের দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক।

পুল্লেলা গোপীচাঁদ অবশ্য এ বিষয়ে সতর্কতার সুর ধরেছেন। তিনি বলেন, “প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে হচ্ছে, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করে। এটি আমাদের জিনিসগুলো বড় আকারে দেখতে, যা খালি চোখে ধরা পড়ে না তা লক্ষ করতে সাহায্য করে। শীর্ষ খেলোয়াড়দের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গ্রাসরুট স্তরে এটি ততটা জরুরি নাও হতে পারে। আমাদের বুঝতে হবে, কতটা প্রযুক্তি কোথায় প্রয়োজন। কোচিংয়ে মানবিক উপাদানই এখনও শিল্পের মূল।” গোপীচাঁদের মতে, প্রযুক্তি সহায়ক হলেও, মানুষের স্পর্শ এখনও অপরিহার্য।

সমান সুযোগের দাবি
অঞ্জু ববি জর্জ প্রযুক্তির ব্যবহারে সমতার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “একজন ক্রীড়াবিদকে গড়ে তোলার সময় সঠিক জিনিস দরকার। প্রযুক্তি আমাদের ঘাটতি বোঝাতে সাহায্য করে। সম্প্রতি অনেক কিছু বদলেছে। আমার মত হলো, প্রযুক্তি সবার জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য হওয়া উচিত। এমন পরিস্থিতি হওয়া উচিত নয় যে কিছু মানুষের প্রযুক্তি আছে আর অন্যদের নেই। এটি সবার জন্য সমান হওয়া দরকার।” অঞ্জু জানান, প্রযুক্তি শুধুমাত্র অভিজাতদের হাতে সীমাবদ্ধ থাকলে ক্রীড়ায় অসমতা বাড়বে।

জয়দীপ কর্মকার প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “প্রযুক্তি কী? এটি মূলত ডেটার অ্যাক্সেস। এটি দুর্বলতা এবং শক্তি পরিমাপে একটি বর। প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতির জন্য এটি ভালো। কিন্তু প্রযুক্তি এবং তার অ্যাক্সেস একসঙ্গে চলা উচিত।” তাঁর মতে, প্রযুক্তি যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে এটি ক্রীড়াবিদদের জন্য বড় সুবিধা হতে পারে।

উচ্চ স্তরে প্রযুক্তির ভূমিকা
স্কোয়াশ তারকা সৌরভ ঘোষাল মনে করেন, প্রযুক্তি উচ্চ স্তরে বেশি কার্যকর। তিনি বলেন, “এটি হাজার হাজার খেলা স্ক্যান করে প্যাটার্ন দেয়। আমরা প্রতিপক্ষের খেলা অধ্যয়ন করতে পারি। এটি প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। এটাই প্রযুক্তির মূল্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি ডেটা। আপনি কীভাবে এটি ব্যবহার করবেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।” সৌরভ জানান, প্রযুক্তি কৌশল তৈরিতে সহায়ক হলেও, মাঠে সাফল্য নির্ভর করে খেলোয়াড়ের ওপর।

ক্রীড়ায় প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ
এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে প্রযুক্তি ক্রীড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এআই এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটির মতো উদ্ভাবন খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বাড়াতে এবং কোচদের কৌশল উন্নত করতে সাহায্য করছে। তবে এর ব্যবহারে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। গোপীচাঁদের মতে, গ্রাসরুট স্তরে মানবিক কোচিংয়ের গুরুত্ব বেশি, যখন শীর্ষ স্তরে প্রযুক্তি অপরিহার্য। অঞ্জু ও কর্মকারের বক্তব্যে উঠে এসেছে অ্যাক্সেসের সমতা এবং সঠিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা। সৌরভের কথায়, প্রযুক্তি ডেটা সরবরাহ করে, কিন্তু সাফল্য নির্ভর করে তার প্রয়োগের ওপর।

বাংলার প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তি
বাংলায় ক্রীড়ার উন্নতির জন্য প্রযুক্তির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ফুটবল, ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলায় প্রতিভা প্রচুর, কিন্তু প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাবে অনেকে পিছিয়ে পড়েন। অঞ্জুর সমতার আহ্বান বাংলার ক্রীড়াবিদদের জন্যও প্রযোজ্য। যদি গ্রামীণ এলাকার খেলোয়াড়রা প্রযুক্তির সুবিধা না পান, তবে শহরের সঙ্গে বৈষম্য বাড়বে। গোপীচাঁদের কথায়, গ্রাসরুটে প্রশিক্ষণের মান উন্নত করতে প্রযুক্তির পাশাপাশি কোচদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে।

প্রযুক্তির সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
প্রযুক্তি ক্রীড়ায় অনেক সুবিধা এনেছে। এটি খেলোয়াড়দের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে, প্রতিপক্ষের কৌশল বোঝাতে এবং প্রশিক্ষণকে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, এআই দিয়ে প্রতিপক্ষের খেলার প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করা যায়, যা সৌরভ ঘোষালের মতো খেলোয়াড়দের কৌশল তৈরিতে সহায়ক। অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রশিক্ষণে বাস্তবতার অনুভূতি যোগ করে। তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে—অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতা মানবিক দিকটিকে দুর্বল করতে পারে।

টাটা স্টিল ট্রেইলব্লেজার্সের এই অধিবেশনটি ক্রীড়ায় প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে একটি সুষ্ঠু আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে। পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির মতামত থেকে স্পষ্ট, প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, তবে এর ব্যবহারে ভারসাম্য এবং সমতা রক্ষা করা জরুরি। ভারতীয় ক্রীড়ার ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ অপরিহার্য। বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীরা এই আলোচনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রযুক্তির সুবিধা নিজেদের ক্রীড়ায় কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা ভেবে দেখতে পারেন।

Related Posts

অলিম্পিক পদকজয়ী ললিতের গ্যারাজে এল নতুন MG Windsor EV

ভারতের পুরুষ হকি দলের অন্যতম স্ট্রাইকার ললিত উপাধ্যায় (Lalit Upadhyay) সম্প্রতি নিজের নতুন MG Windsor EV গাড়ির চাবি হাতে পেলেন। সম্প্রতি এই অলিম্পিক পদকজয়ী খেলোয়াড়কে…

Khelo India Winter Games: গুলমার্গে সেনাবাহিনী ও লাদাখের তীব্র লড়াই

খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস ২০২৫-এর (Khelo India Winter Games) দ্বিতীয় পর্ব রবিবার, ৯ মার্চ, জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমার্গের মনোরম কংডুরি ঢালে শুরু হতে চলেছে। এই…