
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (ICC Champions Trophy) ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে ভারতীয় ওপেনার শুভমান গিল (Shubman Gill) স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে দলের মধ্যে অধিনায়ক রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) অবসর নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। ম্যাচের আগের দিন দুবাইয়ে প্রি-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে গিল জোর দিয়ে বলেছেন, পুরো দল, রোহিত শর্মা সহ, এই গুরুত্বপূর্ণ ফাইনালের দিকে পুরোপুরি মনোযোগী। এই মুহূর্তে অবসরের জল্পনা খারিজ করে তিনি বলেন, দলের লক্ষ্য আরেকটি বড় আইসিসি শিরোপা জয়।
গিল সাংবাদিকদের বলেন, “ড্রেসিংরুমে বা আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। এমনকি রোহিত ভাইও আমাদের সকলের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালের কথাই ভাবছেন। এখন এমন কিছুর কথা নেই।” তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে রোহিত সম্ভবত ফাইনালের পরে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। “আমার মনে হয়, কাল ম্যাচ শেষ হলে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। দলের মধ্যে এই নিয়ে কোনও কথা হয়নি,” গিল যোগ করেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে দলের একমাত্র লক্ষ্য এখন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়, এবং রোহিতের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব এই উচ্চ-চাপের ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভারত এই টুর্নামেন্টে এখনও অপরাজিত রয়েছে। অন্যদিকে, মিচেল স্যান্টনারের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডও ব্যাট ও বলে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। এই ফাইনাল ২০০০ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালের একটি মহাকাব্যিক সিক্যুয়েল হতে চলেছে, যেখানে নিউজিল্যান্ড জয়ী হয়েছিল। ভারতীয় দল ২০১৯ সালের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল এবং ২০২১ সালের আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া। গত সপ্তাহে গ্রুপ পর্বে এই দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ভারত ৪৪ রানে জয়ী হয়েছিল। সেই ম্যাচে ভারত ৫০ ওভারে ২৪৯ রান করে এবং নিউজিল্যান্ডকে ৪৬তম ওভারে ২০৫ রানে অলআউট করে দেয়।
সেই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরি ৮ ওভারে ৫/৪২ নিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন। ভারতের হয়ে শ্রেয়াস আইয়ার ৯৮ বলে ৭৯ রান করে সর্বোচ্চ স্কোরার হন। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ১২০ বলে ৮১ রানের একটি সাহসী ইনিংস খেললেও মিডল অর্ডার থেকে তেমন সমর্থন পাননি। ভারতের স্পিনাররা মিলে ৯টি উইকেট নেন, যার মধ্যে ‘গোপন অস্ত্র’ বরুণ চক্রবর্তী তাঁর দ্বিতীয় ওডিআই ম্যাচে ৫/৪২ নিয়ে নজর কাড়েন—আশ্চর্যজনকভাবে হেনরির সঙ্গে একই পরিসংখ্যান।
এই ফাইনালে রোহিত শর্মার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এই টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে স্থিতিশীল না হলেও, তাঁর নেতৃত্বে ভারত টানা চারটি জয় নিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছে। সমালোচকরা তাঁর ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, গিলের বক্তব্যে স্পষ্ট যে দলের মধ্যে রোহিতের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। গিল নিজেও এই টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে রয়েছেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপরাজিত শতরান এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪৬ রানের ইনিংসের মাধ্যমে তিনি দলের ওপেনিংকে শক্তিশালী ভিত দিয়েছেন। তবে ফাইনালে তাঁর ও রোহিতের ওপেনিং জুটি নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হয়, সেটাই ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করবে।
ভারতীয় দলের স্কোয়াডে রয়েছেন: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, অক্ষর পটেল, কেএল রাহুল (উইকেটকিপার), হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, হর্ষিত রানা, মোহাম্মদ শামি, কুলদীপ যাদব, ঋষভ পন্থ, ওয়াশিংটন সুন্দর, বরুণ চক্রবর্তী এবং অর্শদীপ সিং। নিউজিল্যান্ড দলে আছেন: উইল ইয়ং, ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসন, রাচিন রবীন্দ্র, টম ল্যাথাম (উইকেটকিপার), গ্লেন ফিলিপস, মাইকেল ব্রেসওয়েল, মিচেল স্যান্টনার (অধিনায়ক), ম্যাট হেনরি, কাইল জেমিসন, উইলিয়াম ও’রোর্ক, ড্যারিল মিচেল, নাথান স্মিথ, মার্ক চ্যাপম্যান এবং জ্যাকব ডাফি।
এই ম্যাচে ভারতের স্পিন আক্রমণ আবারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বরুণ চক্রবর্তী, কুলদীপ যাদব এবং রবীন্দ্র জাদেজার মতো স্পিনাররা দুবাইয়ের পিচে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে চাপে রাখতে পারেন। অন্যদিকে, মোহাম্মদ শামি এবং অর্শদীপ সিংয়ের পেস আক্রমণও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ম্যাট হেনরি এবং কাইল জেমিসনের গতি এবং কেন উইলিয়ামসনের অভিজ্ঞতা ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ফাইনালে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা বেশি, কারণ তারা টুর্নামেন্টে অপরাজিত রয়েছে এবং দলের ভারসাম্য অত্যন্ত শক্তিশালী। তবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের অতীত রেকর্ড—বিশেষ করে বড় টুর্নামেন্টে—একটি সতর্কতার ঘণ্টা। ২০০০ সালের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের স্মৃতি এখনও ভারতীয় সমর্থকদের মনে তাজা। এই ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে ভারত সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাইবে।
রোহিত শর্মার অবসর নিয়ে জল্পনা গত কয়েক মাস ধরে চলছে, বিশেষ করে তাঁর টেস্ট ফর্মের সমালোচনার পর। তবে গিলের বক্তব্যে স্পষ্ট যে দল এখন শুধু ফাইনালের দিকে মনোনিবেশ করেছে। রোহিত যদি এই টুর্নামেন্ট জিততে পারেন, তবে তাঁর অবসরের সিদ্ধান্ত আরও কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, হারলে তিনি ওডিআই ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন, যেমনটি কিছু প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এই ফাইনাল শুধু একটি ম্যাচ নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হতে পারে। সমর্থকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, দেখার জন্য যে রোহিতের নেতৃত্বে ভারত কীভাবে নিউজিল্যান্ডের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে।