Urmila Pable Inspirational Journey: খেলো ইন্ডিয়ায় উর্মিলার অনুপ্রেরণাদায়ক অভিষেক

ব্যক্তিগত জীবনের কষ্ট প্রায়ই মানুষকে অসাধারণ ক্রীড়াবিদে রূপান্তরিত করে, তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ এবং পরিপক্কতার জন্ম দেয়। মহারাষ্ট্রের নবি মুম্বইয়ের ২৩ বছর বয়সী উর্মিলা পাবলে (Urmila Pable ) এর জ্বলন্ত উদাহরণ। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারানো উর্মিলা এবং তাঁর ভাইকে একা হাতে বড় করেছেন তাঁর মা। শিক্ষার দিক থেকে তেমন পড়াশোনা না করলেও, মা সবসময় মেয়ের স্বপ্নে বিশ্বাসী ছিলেন। বছরের পর বছর ধরে উর্মিলা স্কেটবোর্ডিংয়ে নিজের জন্য একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করেছেন এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এখন তিনি স্নোবোর্ডিংয়ে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক অভিষেক করেছেন, খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস ২০২৫-এ গুলমার্গে ব্রোঞ্জ পদক জিতে—যদিও এই খেলার প্রশিক্ষণ তিনি শুরু করেছিলেন মাত্র ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে।

স্কেটবোর্ড থেকে স্নোবোর্ড: একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন
উর্মিলার স্নোবোর্ডিংয়ে আগমন অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত মনে হতে পারে, কিন্তু পেশাদার স্কেটবোর্ডার হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা তাঁকে এই খেলাটি দ্রুত আয়ত্ত করতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, “আমি এই মরশুমে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে স্নোবোর্ডিং শুরু করেছি এবং একটিও বিরতি নিইনি। স্কেটবোর্ডিংয়ে আমি ভারতীয় দলের অংশ এবং অনেক জাতীয় পদক জিতেছি, তাই স্নোবোর্ডিং শেখা আমার কাছে স্বাভাবিক লেগেছে।” তাঁর প্রথম খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমসেই তিনি পডিয়ামে উঠেছেন। এই দ্রুত সাফল্যের পেছনে তাঁর কোচ রইস খানের বড় অবদান রয়েছে, যাঁকে তিনি তাঁর এই কৃতিত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

“আমার কোচ আমার এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর জন্যই আমি এত দ্রুত শিখতে পেরেছি। আমি নিজের জন্য গর্বিত এবং ভবিষ্যতে এই খেলাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহী। আমার লক্ষ্য পরবর্তী মরশুমে সোনার পদক জেতা,” বলেন উর্মিলা।

স্কেটবোর্ডিংয়ে অর্জন
স্নোবোর্ডিং তাঁর নতুন আবেগ হলেও, স্কেটবোর্ডিং তাঁর প্রথম ভালোবাসা। উর্মিলা সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিযোগিতা করেছেন। তিনি ৩৬তম জাতীয় গেমসে রুপোর পদক জিতেছেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় ওয়ার্ল্ড স্কেটবোর্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যা ছিল অলিম্পিক বাছাইপর্বের অংশ। তিনি বলেন, “এই মরশুমে আমি ভারতে স্কেটবোর্ডিংয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছি। ২০২৩ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিযোগিতা করা আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমি দুটি খেলাতেই ভালো করতে চাই।”

চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা: আত্মনির্ভরতার যাত্রা
ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর উর্মিলাকে অল্প বয়সেই দায়িত্ব নিতে হয়েছে। ১৭ বছর বয়স থেকে তিনি নিজের শিক্ষা এবং খেলার খরচ নিজেই জোগাড় করছেন। তিনি বলেন, “আমাকে নিজের জন্য নিজেকে দাঁড় করাতে হয়েছে। আমি একা ভ্রমণ করেছি, স্বাধীন হতে শিখেছি, নিজের যত্ন নিয়েছি। খেলাধুলো আমাকে মানসিক এবং শারীরিক শক্তি দিয়েছে। যতবার পড়েছি, ততবার উঠে দাঁড়িয়েছি।”

আর্থিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি কখনও স্বপ্নকে বাধা হতে দেননি। তাঁর মা আর্থিকভাবে সাহায্য করতে না পারলেও, তাঁর মানসিক সমর্থন ছিল অটুট। “আমার মা সবসময় আমার উপর ভরসা রেখেছেন। তিনি বেশি শিক্ষিত না হলেও, আমরা আমার পথে দৃঢ় বিশ্বাস রেখেছিলাম। আমি যা করেছি, সব নিজে শিখেছি, খেলার মাধ্যমে পাওয়া মানুষদের সমর্থনে,” বলেন উর্মিলা।

সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ক্রীড়াবিদ হওয়ার পাশাপাশি উর্মিলা একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারও। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ১১০,০০০-এর বেশি ফলোয়ার রয়েছে। এটি তাঁকে স্কেটবোর্ডিং কোম্পানিগুলোর থেকে স্পনসরশিপ পেতে সাহায্য করেছে, যা তাঁর প্রশিক্ষণের আর্থিক ভিত্তি হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “স্কেটবোর্ডিংয়ের জন্য আমার স্পনসর আছে। সোশ্যাল মিডিয়াও আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে। স্নোবোর্ডিংয়ের জন্য আমি পরবর্তী মরশুমে বিদেশে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করছি, যাতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে প্রতিযোগিতা করতে পারি। আমি দুটি খেলাই একসঙ্গে চালিয়ে যেতে চাই।”

ভবিষ্যতের লক্ষ্য: বড় মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব
উর্মিলা পাবলের যাত্রা—স্কেটবোর্ডিং থেকে স্নোবোর্ডিং, ব্যক্তিগত সংগ্রাম থেকে জাতীয় সাফল্য—একটি অসাধারণ গল্প। এটি তাঁর স্থিতিস্থাপকতা, আবেগ এবং দৃঢ়সংকল্পের প্রতিফলন। তিনি দুটি খেলাতেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন এবং বিশ্ব মঞ্চে, সম্ভবত অলিম্পিকে, ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখেন। “খেলাধুলো আমাকে শিখিয়েছে কখনও হাল না ছাড়তে। যাই আসুক না কেন, আমি এগিয়ে যাব,” বলেন তিনি।

খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমসে সাফল্য
গুলমার্গে অনুষ্ঠিত খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস ২০২৫-এ উর্মিলার ব্রোঞ্জ পদক জয় তাঁর সম্ভাবনার প্রমাণ। এই টুর্নামেন্টে ভারতীয় সেনাবাহিনী শিরোপা রক্ষা করেছে, এবং লাদাখ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে। উর্মিলার মতো তরুণ ক্রীড়াবিদদের উত্থান ভারতীয় শীতকালীন খেলার ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। তিনি মাত্র কয়েক সপ্তাহের প্রশিক্ষণে এই সাফল্য অর্জন করেছেন, যা তাঁর প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রতিফলন।

সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
উর্মিলার এই সাফল্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁর গল্প অনেক তরুণ ক্রীড়াবিদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। ভক্তরা মনে করেন, তিনি ভারতীয় স্কেটবোর্ডিং এবং স্নোবোর্ডিংয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেন। তাঁর কোচ রইস খানও তাঁর সম্ভাবনায় আস্থাশীল। তিনি বলেন, “উর্মিলার মধ্যে অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে। তিনি যদি সঠিক সুযোগ এবং প্রশিক্ষণ পান, তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের জন্য পদক জিততে পারেন।”
উর্মিলা পাবলের জীবন গল্প প্রমাণ করে যে স্বপ্ন যদি দৃঢ়সংকল্পের সঙ্গে এগিয়ে যায়, তবে কোনও বাধাই বড় হয় না। তাঁর অটল মনোভাব এবং কঠোর পরিশ্রম তাঁকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমসে তাঁর ব্রোঞ্জ পদক কেবল শুরু। ভারতীয় ক্রীড়া জগতের এই উঠতি তারকা থেকে ভক্তরা ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্য আশা করছেন। তিনি যদি তাঁর পরিকল্পনা মতো বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে অলিম্পিকের মতো মঞ্চে পৌঁছাতে পারেন, তবে তা ভারতীয় শীতকালীন খেলার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে।

  • Related Posts

    Kerala Blasters FC: আইএসএলে হতাশাগ্রস্ত কেনা কেরালা ব্লাস্টার্সের নজর সুপার কাপ

    ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL 2024-25) কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র (Kerala Blasters) মরসুম হতাশার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। তাদের শেষ ম্যাচে তরুণ ও সংগ্রামী হায়দ্রাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে…

    Australia Holi celebration: ২০২৩ বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় হোলিতে ক্রিকেট উৎসব

    ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এবার হোলির উৎসবে (Australia Holi celebration) এক অনন্য উদ্যোগ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করেছে। হোলির রঙিন উৎসব উপলক্ষে তারা শুধু শুভেচ্ছাই জানায়নি,…