Nita Ambani on India’s Win: চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়কে ঐতিহাসিক বলে নীতার শুভেচ্ছা ‘বয়েজ ইন ব্লু’কে

ভারতীয় ক্রিকেট দল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪ উইকেটের দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ইতিহাস গড়েছে। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ভারত তৃতীয়বারের জন্য এই মর্যাদাপূর্ণ শিরোপা জিতে নিয়েছে, যা বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের আধিপত্যকে আরও মজবুত করেছে। এই জয়ের পর দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন নীতা আম্বানি (Nita Ambani ) দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন।

নীতা আম্বানি তাঁর বিবৃতিতে এই জয়কে “গর্বের এবং ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “ভারতের জন্য কী গর্বের এবং ঐতিহাসিক মুহূর্ত! আমাদের ‘বয়েজ ইন ব্লু’-কে আন্তরিক অভিনন্দন, যারা আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ তৃতীয়বার জিতে দেশকে বিশ্ব মঞ্চে উজ্জ্বল করে তুলেছে। এই জয় কেবল ক্রিকেট নয়—এটি একশো কোটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন, একটি জাতির উচ্ছ্বসিত গর্ব। ভারত উজ্জ্বল, এবং বিশ্ব দেখছে। জয় হিন্দ।” তাঁর এই বক্তব্যে ভারতীয় ক্রিকেটের এই সাফল্যকে জাতীয় গৌরবের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “একটি অসাধারণ খেলা এবং অসাধারণ ফলাফল! আমাদের ক্রিকেট দল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘরে এনেছে বলে গর্বিত। তারা পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেছে। আমাদের দলকে তাদের সার্বিক দুর্দান্ত প্রদর্শনের জন্য অভিনন্দন।” এছাড়াও, কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ দলের “অগ্নিময় শক্তি এবং অপ্রতিরোধ্য আধিপত্য”র প্রশংসা করে বলেছেন, “একটি জয় যা ইতিহাস রচনা করেছে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এ অসাধারণ জয়ের জন্য ভারতীয় দলকে অভিনন্দন। মাঠে তোমাদের অগ্নিময় শক্তি এবং অপ্রতিরোধ্য আধিপত্য দেশকে গর্বিত করেছে, ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। তোমরা সবসময় উড়ন্ত রঙে জয়ী হও।”

টুর্নামেন্টে ভারতের দুর্দান্ত যাত্রা
১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে ভারত শুরু থেকেই অপ্রতিরোধ্য ছিল। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় ভারত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি এবং হার্দিক পান্ডিয়ার ফিনিশিং ভারতকে ৬ উইকেটে জয় এনে দেয়। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালের হারের প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয় দল। মোহাম্মদ শামির ৪ উইকেট এবং কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণিতে অস্ট্রেলিয়া ২৫৮ রানে গুটিয়ে যায়, এবং শ্রেয়স আইয়ারের ৭৮ রানের ইনিংসে ভারত ৫ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয়।

ফাইনালে নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ২৮০ রানের লড়াকু স্কোর গড়ে। তবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা চাপের মুখে দৃঢ়তা দেখায়। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৩৭ বলে ৫৪ রানের দ্রুত ইনিংস খেলে দলের ভিত মজবুত করেন। শ্রেয়স আইয়ার (৬২) এবং কেএল রাহুল (৪৮) মাঝের ওভারে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। শেষ দিকে রিশভ পান্তের ২৮ রানের ক্যামিও ভারতকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসে। বোলিংয়ে বরুণ চক্রবর্তী এবং কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণি নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডার ধ্বংস করে দেয়। বরুণ ৩টি এবং কুলদীপ ২টি উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে তুলে দেন। ৪৮.৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

ভারতের ক্রিকেটীয় আধিপত্য
এই জয়ের মাধ্যমে ভারত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে তিনবার শিরোপা জিতেছে (২০০২, ২০১৩, ২০২৫)। এই টুর্নামেন্টে ভারতের সাফল্য শুধু তাদের খেলোয়াড়দের দক্ষতার প্রমাণ নয়, বরং দলের গভীরতা এবং কৌশলগত পরিকল্পনারও সাক্ষ্য বহন করে। জসপ্রীত বুমরাহর চোটের পর হর্ষিত রানা এবং বরুণ চক্রবর্তীর মতো তরুণ প্রতিভার উত্থান দলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে দলের অভিজ্ঞ এবং তরুণ খেলোয়াড়দের সমন্বয় এই জয়ের মূল চাবিকাঠি।

দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ
এই জয়ের পর দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। কলকাতার ময়দান থেকে মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভ, দিল্লির রাস্তা থেকে চেন্নাইয়ের সমুদ্রতীর—সর্বত্রই ভক্তরা আনন্দে মেতে উঠেছেন। সামাজিক মাধ্যমে ভক্তরা দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একজন ভক্ত লিখেছেন, “এই জয় ভারতীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। রোহিত, কোহলি এবং আমাদের স্পিনাররা আমাদের গর্ব।” আরেকজন লিখেছেন, “তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়—এটি ভারতের ক্রিকেটীয় রাজত্ব।”

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট
পাকিস্তানে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টের ভারতের ম্যাচগুলো দুবাইয়ে খেলা হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেটীয় সম্পর্কের জটিলতাকে আরও একবার তুলে ধরেছে। তবে ভারতীয় দল এই বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের খেলার মাধ্যমে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই জয় ভারতীয় ক্রিকেটের সোনালি অধ্যায়ের সূচনা।

ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ
এই টুর্নামেন্টে ভারতের সাফল্য কেবল একটি শিরোপা জয়ের গল্প নয়, এটি ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনারও ইঙ্গিত দেয়। তরুণ খেলোয়াড়দের উত্থান এবং অভিজ্ঞদের ধারাবাহিকতা ভারতকে আগামী দিনে আরও বড় সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর এই জয় ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় মাইলফলক হয়ে থাকবে।

Related Posts

Champions Trophy 2025: মোদীর তৃতীয় দফায় ICC-খরা কাটছে ভারতের

২০০৭ সালে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ৷ এগারোতে বিশ্বকাপ৷ তেরোতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি৷ মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে তখন আইসিসির সব ট্রফি৷ তবে তেরোতেই যেন শেষ৷ তারপর আইসিসি…

India Celebration: মরুশহরে ‘ইতিহাস’, কলকাতা থেকে মুম্বই-দিল্লিতে উচ্ছ্বসিত দেশবাসী

৯ই মার্চ, ২০২৫ ইতিহাস গড়ল ভারত (India)। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ ফাইনালে (Champions Trophy 2025 Final) পরাজিত নিউজিল্যান্ড (New Zealand)। ভারতের ক্রিকেট দলের এই ঐতিহাসিক জয়ের…