
ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ (Indian Women’s League) ২০২৪-২৫-এর শিরোপার দৌড়ে টিকে থাকল গোকুলাম কেরালা। শনিবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে তারা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওড়িশা এফসি-কে ৩-১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করেছে। এই জয়ের মাধ্যমে মালাবারিয়ানরা তাদের শক্তিশালী অবস্থান আরও মজবুত করল এবং লিগের শীর্ষস্থানের জন্য প্রতিযোগিতায় নিজেদের জায়গা ধরে রাখল। ম্যাচের প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল গোকুলাম।
গোকুলাম কেরালার তারকা স্ট্রাইকার ফাজিলা ইকওয়াপুত এই ম্যাচে দুটি গোল করে (৪২’ এবং ৫৯’ মিনিটে) তাঁর মোট গোলসংখ্যা ১৫-এ পৌঁছে দিয়েছেন। এই মরশুমে তিনি অসাধারণ ফর্মে রয়েছেন এবং গোকুলামের আক্রমণভাগের প্রধান শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অন্যদিকে, ওড়িশা এফসি-র স্ট্রাইকার পিয়ারি জাক্সার আত্মঘাতী গোল (৩২’ মিনিটে) গোকুলামকে প্রথমার্ধে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। দ্বিতীয়ার্ধে ওড়িশার হয়ে সাবস্টিটিউট নেহা (৫০’ মিনিটে) একটি গোল করলেও, তা ম্যাচের ফলাফল বদলাতে পারেনি।
ম্যাচের শুরু থেকেই গোকুলাম কেরালা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার মাধ্যমে ওড়িশার ডিফেন্সের উপর চাপ সৃষ্টি করে। প্রথমার্ধে তাদের দ্রুত পাসিং এবং সমন্বয় ওড়িশার রক্ষণভাগকে বিপাকে ফেলে দেয়। ৩২তম মিনিটে পিয়ারি জাক্সার আত্মঘাতী গোলের মাধ্যমে গোকুলাম ১-০ এগিয়ে যায়। এই গোলটি ওড়িশার জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল, কারণ তারা তখনও ম্যাচে নিজেদের ছন্দ খুঁজে পায়নি। এরপর ৪২তম মিনিটে ফাজিলা ইকওয়াপুত দুর্দান্ত একটি গোল করে গোকুলামের লিড ২-০-এ পৌঁছে দেন। তাঁর এই গোলটি ছিল গতি, দক্ষতা এবং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
দ্বিতীয়ার্ধে ওড়িশা এফসি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ৫০তম মিনিটে সাবস্টিটিউট নেহার গোলের মাধ্যমে তারা স্কোরলাইন ২-১-এ নিয়ে আসে। এই গোলটি ওড়িশার সমর্থকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে এবং মনে হয়েছিল তারা ম্যাচে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু গোকুলামের রক্ষণভাগ এবং মিডফিল্ডের দৃঢ়তা ওড়িশার এই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়। ৫৯তম মিনিটে ফাজিলা ইকওয়াপুত আবারও গোল করে ম্যাচটিকে ওড়িশার নাগালের বাইরে নিয়ে যান। তাঁর দ্বিতীয় গোলটি ছিল একটি দলগত প্রচেষ্টার ফল, যেখানে গোকুলামের মিডফিল্ডাররা বলটি সুনিপুণভাবে ফরোয়ার্ডে পৌঁছে দেয় এবং ফাজিলা সুযোগটির পুরো সদ্ব্যবহার করেন।
ওড়িশা এফসি গত মরশুমে আইডব্লিউএল-এর শিরোপা জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। তাদের দলটি ভারতীয় মহিলা ফুটবলে একটি শক্তিশালী নাম হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই ম্যাচে তারা গোকুলামের আক্রমণ এবং কৌশলের কাছে পরাস্ত হয়েছে। পিয়ারি জাক্সার আত্মঘাতী গোল এবং ফাজিলার দুটি গোল তাদের পরিকল্পনাকে ভেস্তে দেয়। দ্বিতীয়ার্ধে নেহার গোল সত্ত্বেও, ওড়িশা পুরোপুরি ম্যাচে ফিরতে পারেনি। তাদের আক্রমণভাগে ধার এবং ফিনিশিংয়ের অভাব স্পষ্ট ছিল।
গোকুলাম কেরালা আইডব্লিউএল-এর ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল। তারা এর আগে তিনবার (২০১৯-২০, ২০২১-২২, ২০২২-২৩) শিরোপা জিতেছে। এই মরশুমে তারা আবারও শিরোপার জন্য শক্তিশালী দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করছে। ফাজিলা ইকওয়াপুতের নেতৃত্বে তাদের আক্রমণভাগ এই মরশুমে অত্যন্ত শক্তিশালী দেখাচ্ছে। তিনি ইতিমধ্যেই ১৫টি গোল করে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। তাঁর গতি, শক্তি এবং গোলের সামনে শান্ত থাকার ক্ষমতা গোকুলামকে একটি ভয়ঙ্কর দল হিসেবে গড়ে তুলেছে।
এই জয়ের ফলে গোকুলাম কেরালা লিগ টেবিলে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে। তবে ওড়িশা এফসি-র হাতে এখনও কয়েকটি ম্যাচ বাকি রয়েছে এবং তারা শিরোপার দৌড়ে টিকে আছে। গত মরশুমে ওড়িশা অপরাজিত থেকে শিরোপা জিতেছিল, কিন্তু এই পরাজয় তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে নিজেদের সমর্থকদের সামনে এমন হার তাদের কোচ এবং খেলোয়াড়দের জন্য প্রশ্ন তুলেছে।
এই ম্যাচটি ভারতীয় মহিলা ফুটবলের উন্নতির একটি প্রমাণ। গোকুলাম এবং ওড়িশার মতো দলগুলো নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলছে এবং নতুন প্রতিভার উত্থান ঘটছে। ফাজিলা ইকওয়াপুতের মতো বিদেশি খেলোয়াড়রা লিগের মান বাড়াচ্ছে, আর পিয়ারি জাক্সা বা নেহার মতো দেশীয় খেলোয়াড়রা তাদের দক্ষতা প্রমাণ করছে। আইডব্লিউএল-এর এই মরশুমে আটটি দল অংশ নিচ্ছে এবং প্রতিটি ম্যাচই শিরোপার দৌড়কে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলছে।
ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে, গোকুলাম কেরালা এই মরশুমে তাদের সামঞ্জস্য এবং কৌশলগত শৃঙ্খলার জন্য প্রশংসার দাবিদার। তাদের দলগত খেলা এবং আক্রমণাত্মক মনোভাব তাদের শিরোপার অন্যতম দাবিদার করে তুলেছে। অন্যদিকে, ওড়িশা এফসি-কে এই পরাজয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তাদের বাকি ম্যাচগুলোতে জয়ের ধারা ফিরিয়ে আনতে না পারলে গত মরশুমের সাফল্য পুনরাবৃত্তি করা কঠিন হবে।
ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে এই ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। গোকুলামের সমর্থকরা ফাজিলার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, আর ওড়িশার ভক্তরা আশা করছেন দল আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। আইডব্লিউএল-এর এই মরশুমের শিরোপা কে জিতবে, তা নিয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে গোকুলাম কেরালা এই জয়ের মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—তারা শিরোপার জন্য লড়তে প্রস্তুত।