প্রয়াত জেল বন্দি প্রাক্তন পাক বিশ্বকাপ জয়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান?

ভারত ও পাকিস্তানের (India Pakistan Tensions) মধ্যে সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার আবহে একটি ভুয়ো খবরে ফের উত্তাল হয়ে উঠল দুই দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ। খবর ছড়ায়, পাকিস্তানের (Pakistan) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান (Imran Khan) জেল হেফাজতে মারা গিয়েছেন। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট, যেখানে একটি রক্তাক্ত ছবি দিয়ে দাবি করা হয়, ইমরান খানকে হত্যা করেছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই।

যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়, পুরো খবরটি ভুয়ো। ওই বিবৃতি, যা পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের নামে প্রচারিত হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ জাল। ভাইরাল হওয়া ছবিটিও ছিল বহু পুরনো—২০১৩ সালে লাহোরে একটি নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত ফর্ক-লিফট থেকে পড়ে আহত হয়েছিলেন ইমরান। সেই ছবিই নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয় বিভ্রান্তি তৈরির উদ্দেশ্যে।

এদিকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ঝড় ওঠে এই ভুয়ো খবরে। ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর সমর্থকেরা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। সরকারের বিরুদ্ধে ওঠে গোপন হত্যার অভিযোগ। পিটিআই-এর খাইবার পাখতুনখওয়া অঞ্চলের সভাপতি জুনেইদ আকবর বলেন, “ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের আবহে ইমরান খানকে খুন করে তা ভারতীয় ড্রোন হামলার আড়ালে ঢেকে দেওয়া হতে পারে। শাহবাজ শরিফের সরকারের দিকে আমাদের সন্দেহের আঙুল উঠছেই।”

তৈরী হবে নতুন বাগান! নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ সৃঞ্জয়ের

বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, রাষ্ট্রদ্রোহ, বিচারব্যবস্থার প্রতি অবমাননা-সহ ২০০-রও বেশি অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর দল অভিযোগ করে আসছে, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন ইমরান। এবার সেই আশঙ্কা আরও গভীর হয়েছে যুদ্ধের পরিস্থিতিকে ঘিরে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধকালীন সময়ে গুজব ও ভুয়ো খবরের দাপট আরও বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভারত-পাক দ্বন্দ্বের মাঝেই দুই দেশেরই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে একের পর এক অসত্য ও বিভ্রান্তিকর খবর। যেমন, পাকিস্তানের তরফে দাবি করা হয় যে, তারা অন্তত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ছিল আধুনিক রাফাল জেট। তবে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ যখন প্রমাণের জন্য চাপের মুখে পড়েন, তখন তিনি বলেন, এই তথ্য তিনি পেয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই।

অন্যদিকে, ভারতের কিছু টেলিভিশন চ্যানেলও সেনার অপারেশন ও অভিযানের বিষয়ে ভিত্তিহীন ও অসত্য খবর প্রচার করেছে বলে অভিযোগ। সেনাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়, এমন খবর প্রচার করলে কৌশলগতভাবে ক্ষতি হতে পারে এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমগুলিকে সতর্ক করা হয়, যেন তারা যাচাই না করে কোনো তথ্য প্রকাশ না করে।

এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিল, যুদ্ধ ও সংঘর্ষের আবহে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে ভুয়ো খবর ও মিথ্যা প্রচার। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে এই ধরনের প্রচার কার্যকর হলেও, শেষমেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় গণতন্ত্র ও তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের তথ্য যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হলে গণমাধ্যম, সরকার এবং সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদেরও প্রয়োজন তথ্য যাচাই করে নেওয়ার, শুধুমাত্র হেডলাইন বা ভাইরাল ছবি দেখে বিশ্বাস না করার অভ্যাস গড়ে তোলা।

এই ঘটনার পরও ইমরান খানের শারীরিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে তিনি এখন বন্দি অবস্থায় থাকায়, তাঁর প্রতি কোনও ষড়যন্ত্র হলে প্রতিরোধের সুযোগ কম। ফলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির দিক থেকেও এই মুহূর্তে নজর রাখা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে সত্যি কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।

  • Related Posts

    ISL পর এশিয়ার মঞ্চে ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে সফল বাংলার এই দল

    এএফসি প্রতিযোগিতায় (AFC Tournament) ভারতীয় ক্লাবগুলোর (Indian Football Club) অংশগ্রহণ এখন আর নতুন কিছু নয়। তবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে…

    ভারতের মাটিতে ফাইনাল আয়োজনে কাঁটা পাকিস্তান!

    বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) টেস্ট ক্রিকেটকে এক নতুন দিশা দিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি ভক্তদের আগ্রহ ধরে রাখতে ও এই ফরম্যাটে একটি বিশ্বমানের প্রতিযোগিতা তৈরি করতে…