
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই (DGMO Rajiv Ghai) সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার সময় বিরাট কোহলির প্রশংসা করেছেন। পহেলগাঁওয়ের গত মাসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জবাবে ভারত এই অপারেশন পরিচালনা করে। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি হালকা মেজাজে বলেন, “আজ হয়তো ক্রিকেট নিয়েও কিছু বলা উচিত, কারণ আমি দেখলাম বিরাট কোহলি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। অনেক ভারতীয়ের মতো তিনি আমারও প্রিয় ক্রিকেটার।”
বিরাট কোহলি, ভারতীয় ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি, জুন মাসে ইংল্যান্ড সফরের জন্য ভারতীয় দল ঘোষণার কয়েকদিন আগেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সী এই ব্যাটিং মায়েস্ত্রো ২০১১ সালে টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখেন এবং তারপর থেকে তিনি ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের রূপ বদলে দিয়েছেন। তার এই সিদ্ধান্ত এসেছে অধিনায়ক রোহিত শর্মার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণার কিছুদিন পরেই, যা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একটি যুগের অবসানের ইঙ্গিত দেয়।
ইনস্টাগ্রামে একটি আবেগঘন পোস্টে কোহলি টেস্ট ক্রিকেটকে তার জীবনের একটি গভীর ব্যক্তিগত যাত্রা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাগি নীল জার্সি পরার ১৪ বছর হয়ে গেল। সত্যি বলতে, আমি কখনো ভাবিনি এই ফরম্যাট আমাকে এত দূর নিয়ে যাবে। এটি আমাকে পরীক্ষা করেছে, আমাকে গড়ে তুলেছে এবং এমন শিক্ষা দিয়েছে যা আমি সারাজীবন বহন করব। সাদা পোশাকে খেলার মধ্যে একটা গভীর ব্যক্তিগত অনুভূতি আছে। নীরব পরিশ্রম, দীর্ঘ দিনের খেলা, সেই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো যা কেউ দেখে না কিন্তু সেগুলো চিরকাল মনে থেকে যায়। এই ফরম্যাট থেকে বিদায় নেওয়া সহজ নয়, কিন্তু এটি সঠিক মনে হচ্ছে। আমি আমার সবকিছু দিয়েছি, আর এটি আমাকে তার চেয়েও অনেক বেশি ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি—খেলার জন্য, আমার সতীর্থদের জন্য এবং প্রতিটি মানুষের জন্য যারা আমাকে এই যাত্রায় সমর্থন করেছেন। আমি সবসময় আমার টেস্ট ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকাব হাসিমুখে।”
কোহলির টেস্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল অসাধারণ। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে তিনি ১১৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে তিনি ৮৮৪৮ রান করেছেন, গড় ৪৯.১৫। তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৭টি শতরান এবং ২৮টি অর্ধশতরান। অধিনায়ক হিসেবে তিনি ভারতকে ৬৮টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যেখানে ভারত ৪০টি ম্যাচে জয়লাভ করেছে। তার নেতৃত্বে ভারত ২০১৮-১৯ মরশুমে অস্ট্রেলিয়ায় ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় করে, যা ভারতের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
কোহলির খেলার স্টাইল ছিল আক্রমণাত্মক এবং আবেগপ্রবণ। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের মানসিকতা বদলে দিয়েছেন, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে। তার ফিটনেস, শৃঙ্খলা এবং প্রতিশ্রুতি তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি শুধু একজন ব্যাটসম্যানই নন, একজন নেতা ছিলেন যিনি দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তার অবসরের ঘোষণা ভক্তদের মনে মিশ্র অনুভূতি জাগিয়েছে। একদিকে তার অবদানের জন্য গর্ব, অন্যদিকে তার মতো একজন কিংবদন্তির বিদায়ের জন্য দুঃখ। সামাজিক মাধ্যমে ভক্তরা তাকে ‘কিং কোহলি’ বলে সম্বোধন করে তার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করছেন।