
২০২৪ সালের ৯ জুলাই, ভারতীয় ক্রিকেট দলের (India Cricket Team ) কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। কেকেআরের (KKR) মেন্টর হিসেবে তাঁর সাফল্যই, বিসিসিআইয়ের (BCCI) পছন্দের তালিকায় তাঁকে শীর্ষে জায়গা করে দিয়েছিল। একসময় ভারতীয় ক্রিকেটের এক অমূল্য রত্ন হিসেবে পরিচিত গম্ভীর, আজও ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম মন্ত্রস্থায়ী ব্যক্তিত্ব। আইপিএলে কেকেআরের সাথে তাঁর অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের দক্ষতা বিসিসিআই-এর কাছে এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছিল। কোচিং কেরিয়ারের শুরুতেই গম্ভীরকে পুরো স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি নিজের সহকারী কোচ নির্বাচনে কোনো রকম আপোস করেননি।
গম্ভীর নিজেই তাঁর সহকারী কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অভিষেক নায়ারকে। কেকেআরের পুরনো সদস্য হিসেবে অভিষেকের ক্রিকেট দক্ষতা এবং দলের সাথে তাঁর অভিজ্ঞতা কোচিং স্টাফে নতুন শক্তি যোগ করেছিল। শুধু অভিষেক নায়ারই নয়, গম্ভীরের কোচিং স্টাফে যোগ দিয়েছিলেন রায়ান টেন দুশখাতেও। বোলিং পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি দায়িত্ব দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি মর্ণি মর্কেলকে। ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন টি.দিলীপ, যিনি দলের ফিল্ডিংয়ের উন্নতি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
কিন্তু, এক বছরের মধ্যেই কিছুটা হলেও চিত্র বদলাতে দেখা গেছে। ভারতের বিদেশ সফরের পারফরম্যান্সে কিছুটা দুর্বলতা দেখা যাওয়ায় বিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে কোচিং স্টাফে বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের ব্যর্থতার পর এই পরিবর্তন আসে। মেলবোর্ন, অ্যাডিলেড বা হ্যামিলটন—এই সব জায়গায় ভারতের খেলোয়াড়দের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একদিকে যেমন ভারতের খেলোয়াড়রা চাপের মধ্যে খেলছিলেন, অন্যদিকে, সাজঘরের ভিতরেও কিছু অশান্তির খবর আসে। কোচ গম্ভীরের এবং তাঁর সহকারীদের মধ্যে মতানৈক্য এবং কিছু ব্যক্তিগত বিষয়ও সমস্যা সৃষ্টি করেছে বলে জানা গিয়েছিল।
এছাড়াও, তথ্য ফাঁস হওয়ার মত কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা ভারতের দলের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত অশান্তির সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, অভিষেক নায়ারকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাত্র আট মাস আগে ভারতীয় দলের সাথে যোগ দেওয়া নায়ার, আজ সেই চাকরি হারালেন। তাঁর কাজের ধরন এবং দলের সাথে সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতার কারণে বিসিসিআই তাঁকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বর্তমানে, টিম ইন্ডিয়ার কোচিং স্টাফে অভিষেক নায়ার বা টি.দিলীপ, সোহম দেশাইয়ের স্থায়ী বিকল্প ঘোষণা করা হয়নি। তবে, কিছু সাময়িক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাক দায়িত্ব পালন করবেন, আর বোলিং পরামর্শদাতা হিসেবে মর্ণি মর্কেলই থাকবেন। ফিল্ডিং কোচ হিসেবে সাময়িক দায়িত্ব পেয়েছেন রায়ান টেন দুশখাতেও, আর স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যেতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার (South African) আদ্রিয়ান লে রু (Gautam Gambhir)।
আদ্রিয়ান লে রু, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার স্পোর্টস সায়েন্টিস্ট, আইপিএলের গোড়া থেকে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) এর সাথে যুক্ত ছিলেন, তার নতুন দায়িত্ব বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। দীর্ঘ ১২ বছর KKR-এ কাজ করার পর ২০১৯ সালে তিনি কলকাতা ছেড়ে দেন এবং বর্তমানে প্রীতি জিন্টার পাঞ্জাব কিংস (PBKS)-এর সাথে যুক্ত রয়েছেন। তাঁর আইপিএল অভিজ্ঞতা সম্ভবত ভারতের জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এটি আশা করা হচ্ছে।
গম্ভীরের নেতৃত্বে, টিম ইন্ডিয়া এক নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। যদিও কোচিং স্টাফের মধ্যে এই পরিবর্তন কিছুটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে, তবে এটি ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। গম্ভীরের কোচিং স্টাইলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে, নতুন কোচিং স্টাফের সদস্যরা ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতি ও সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
তবে, কোচ গম্ভীরের ওপর এবার বাড়তি চাপ থাকবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে যদি ভারতের পারফরম্যান্স তেমন আশানুরূপ না হয়, তাহলে তাঁর ওপর চাপ আরও বেড়ে যাবে। কেকেআরের মেন্টর হিসেবে গম্ভীরের নেতৃত্ব একেবারে সফল ছিল, তবে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে তাঁর জন্য যাত্রা সহজ হবে না। নতুন সহকারী কোচদের নিয়েও নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কিন্তু যেহেতু তারা সবাই কেকেআর কানেকশনের সাথে যুক্ত, তাই তারা জানেন কীভাবে চাপের মধ্যে সফল হতে হয়।