
গত বছর কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) অনবদ্য ক্রিকেটে মুগ্ধ করে তৃতীয়বারের মতো আইপিএল ট্রফি ঘরে তুলেছিল। দশকের অপেক্ষা শেষে সেই জয়ের নেশা এখনো তাজা ছিল সমর্থকদের মনে। কিন্তু ২০২৫ সালের আইপিএল মরসুমে সেই স্বপ্ন ধূসর হয়ে গেছে। শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজি শুরু থেকেই হোঁচট খেয়েছে, একের পর এক হারে পিছিয়ে পড়েছে। শুরু থেকেই ছন্দপতন, ব্যর্থ কৌশল এবং নেতৃত্বের অভাব কেকেআরের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ইডেন গার্ডেন্সে ঘরের মাঠে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে হেরে প্লে-অফের দৌড় কার্যত শেষ।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—এত সফল একটি দল হঠাৎ কীভাবে পথ হারালো? ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে মূলত দুটি বড় কারণ: গৌতম গম্ভীরের শূন্যতা এবং নিলামে ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত। গত মরসুমে গম্ভীর মেন্টর হিসেবে ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি কেকেআরের পারফরম্যান্সে সুস্পষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। তরুণদের উপর আস্থা, সুনীল নারাইনকে ওপেনার হিসেবে ব্যবহার, স্টার্কের উপর বিশ্বাস—এই কৌশলগুলি কেকেআরকে সফল করেছিল। এবার গম্ভীর জাতীয় দলের কোচ হিসেবে ব্যস্ত থাকায়, তাঁর জায়গা নেওয়া ডোয়েন ব্র্যাভো সেই প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। তাঁর সঙ্গে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের কোচিংও প্রশ্নের মুখে। পেস আক্রমণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব, ব্যাটিং অর্ডারে লাগাতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এবং দলে ভারসাম্যহীনতা কেকেআরকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়।
নিলামে কেকেআরের সিদ্ধান্ত ছিল আরও হতাশাজনক। ৫২ কোটি টাকা খরচ করে ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে নেওয়া হলেও, তাঁর পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা ছিল না। গতবারের ট্রফিজয়ী অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার, মিচেল স্টার্ক বা ফিল সল্টের মতো তারকাদের ধরে রাখার চেষ্টাই করেনি তারা। বদলে ক্যুইন্টন ডি কক, মঈন আলি, মনীশ পাণ্ডে, অনরিখ নর্খিয়ার মতো অতীতের ফর্মহীন তারকাদের দলে ভিড়িয়েছে।
১২ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে কেকেআর এখন তালিকার ষষ্ঠ স্থানে। লখনউ যদি তাদের পরবর্তী ম্যাচ জিতে নেয়, তবে কেকেআর আরও নিচে নেমে যাবে। ফলে আগেভাগেই দল শুরু করেছে আগামী মরসুমের পরিকল্পনা। কোচিং স্টাফে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রবল। সংবাদমাধ্যমে খবর, চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ও ডোয়েন ব্র্যাভোকে ছাঁটাই করে কেকেআর আনতে চায় ইওন মর্গ্যানকে।
ইংল্যান্ডের এই প্রাক্তন অধিনায়ক ২০২১ সালে কেকেআর-কে ফাইনালে তুলেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে কেকেআরের কৌশলে নতুন দিশা আসতে পারে বলে মনে করছে টিম ম্যানেজমেন্ট।