আইলিগ ২ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ‘প্রমোশন’ পেল অভিষেকের দল

ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব (Diamond Harbour FC) এক সময় যাদের নিয়ে খুব বেশি আলোচনাই হত না, তারাই আজ ভারতের ফুটবল (Indian Football) মানচিত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হওয়া এই ক্লাব মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে কলকাতা লিগ থেকে শুরু করে আই লিগ ৩ ও আই লিগ ২ (I-League 2) জিতে আই লিগে উত্তরণ ঘটাল।

১১ এপ্রিল স্পোর্টস অ্যাকাডেমি তিরুরকে ২-১ গোলে হারিয়ে আই লিগে প্রমোশন নিশ্চিত করে ডায়মন্ড হারবার। সেই ম্যাচে পিন্টু মাহাতো ও সুপ্রদীপ হাজরার গোলে জয় পায় তারা। যদিও তার আগেই নেরোকার কাছে স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া হেরে যাওয়ায় পয়েন্ট টেবিলের প্রথম দুইয়ে থাকা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগ থেকে নিয়ম অনুযায়ী শীর্ষ দুই দল প্রমোশন পায় আই লিগে (I-League)। ফলে সেই জয়েই নিশ্চিত হয়ে যায় আই লিগে ডায়মন্ড হারবারের জায়গা।

তবে এখানেই থেমে থাকেনি কিবু ভিকুনার দল। শনিবার রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে চানমারি এফসির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাত্র এক পয়েন্টই যথেষ্ট ছিল লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। কিন্তু ড্র নয়, জিতেই ইতিহাস লিখল ডায়মন্ড হারবার। ম্যাচের ৮৫তম মিনিটে রবি মাণ্ডির করা একমাত্র গোলে ১-০ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। গোলটি আসে বাঁ দিক থেকে আসা একটি ক্রস থেকে, যা ঘূর্ণি হাওয়ার মতো গ্লাভস এড়িয়ে চলে যায় চানমারির গোলকিপারের নাগালের বাইরে।

এই জয়ের ফলে ১৫ ম্যাচে ডায়মন্ড হারবারের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৭ পয়েন্ট। ১১টি ম্যাচ জিতেছে, চারটিতে ড্র করেছে তারা। এখনো পর্যন্ত একটি ম্যাচও হারেনি। অন্যদিকে, চানমারির সংগ্রহ ১৫ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট। শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরু ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে ডায়মন্ড হারবার, ২৬ এপ্রিল, নৈহাটি স্টেডিয়ামে।

ম্যাচের পর উচ্ছ্বসিত কিবু ভিকুনা বলেন, “খুব খুশি। এটা আমাদের সবার জন্য অসাধারণ এক মুহূর্ত। আমরা ভারতের প্রথম ক্লাব যারা আই লিগ ৩ ও আই লিগ ২ জিতেছি। ম্যাচটা কঠিন ছিল, কিন্তু দল হিসেবে আমরা একসঙ্গে লড়েছি। এই সাফল্য দলের সব সদস্যের।”

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেন ক্লাবের প্রধান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জন লেননের বিখ্যাত গান উদ্ধৃত করে লেখেন, “যখন আবেগের সঙ্গে অক্লান্ত পরিশ্রম মেশে, তখন কেউ আটকাতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “এই সাফল্য শুধু আমাদের ক্লাবের নয়, পশ্চিমবঙ্গের ফুটবলের জয়। খেলোয়াড়, কোচ কিবু ভিকুনা ও সাপোর্ট স্টাফদের আমি কুর্নিশ জানাই। যাঁরা হৃদয় দিয়ে এই জার্নিটাকে সফল করেছেন, তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।”

একটা সময় ছিল যখন কলকাতার ফুটবল মানেই ছিল মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল আর মহামেডান স্পোর্টিং। এখন সেই তালিকায় নতুন সংযোজন ডায়মন্ডহারবার এফসি। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আই লিগে খেলা একমাত্র দল হতে চলেছে তারা।

আই লিগ ৩ থেকে শুরু করে এক মরসুমে আই লিগে উত্তরণ – এটা নিছক একটা ক্রীড়া সাফল্য নয়, এটা এক স্বপ্নপূরণের গল্প। ডায়মন্ড হারবার আজ শুধু একটি ফুটবল ক্লাব নয়, হয়ে উঠেছে বাংলার ফুটবল জাগরণের প্রতীক।

  • Related Posts

    ভারতের বহুস্তরীয় বিমান প্রতিরক্ষার সঙ্গে কিংবদন্তি পেসারদের তুলনা ভারতীয় ডিজিএমওর

    ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (dgmo) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই সোমবার ভারতের বহুস্তরীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের পক্ষে…

    কোহলিকে প্রিয় ক্রিকেটার বললেন অপারেশন সিঁদুরের সেনা কর্তা রাজীব ঘাই

    ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই (DGMO Rajiv Ghai) সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার সময় বিরাট কোহলির…