
International Womens Day: ঝাড়খণ্ডের এক ছোট গ্রাম দাহুতে জন্ম নেওয়া সীমা ছোট থেকেই এমন পরিবেশে বড় হয়েছে যেখানে মেয়েদের বাড়ির কাজ ছাড়া কিছু করার অনুমতি ছিল না। গ্রাম্য সমাজে মেয়েদের জন্য শিক্ষা এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ ছিল নিষিদ্ধ, তবে সীমা তার জীবনধারা বদলাতে পারেননি।
নয় বছর বয়সে সীমা যুব ফাউন্ডেশনের ফুটবল প্রোগ্রামে যোগ দেন, যা তার জীবনে এক বিশাল পরিবর্তন আনে। যুব ফাউন্ডেশন মেয়েদের জন্য ক্রীড়া এবং শিক্ষা মাধ্যমে ক্ষমতায়ন কাজ করে, সীমাকে সুযোগ দিয়েছিল, যা তাকে তার গ্রামের লিঙ্গ ভিত্তিক ধারণার বাইরে নিজের প্রতিভা খুঁজে বের করার সুযোগ দেয়। প্রথম দিন থেকেই সীমা ফুটবলে প্রতি এক ধরনের আগ্রহ এবং ভালোবাসা অনুভব করেন।
যুব ফাউন্ডেশনের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে নিতে সীমা ফুটবল মাঠে দ্রুতই দক্ষতা অর্জন করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন এবং নেতৃত্বের গুণাবলী দেখাতে শুরু করেন। ফাউন্ডেশনটি শুধু তাকে একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলে না, বরং শিক্ষা এবং আত্মবিশ্বাসের গুরুত্বও তুলে ধরে। সীমা সঠিক সহায়তার মাধ্যমে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং খেলার মাঠে দুর্দান্ত ফলাফলও করেন, যা তার গ্রামের ক্ষেত্রে এক অদেখা ঘটনা।
সীমার ফুটবল ক্যারিয়ারের পথ সহজ ছিলো না। গ্রাম্য এলাকার মেয়ে হওয়ায় তাকে নানা ধরনের লিঙ্গগত বিভেদ এবং সামাজিক বাধার বারংবার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যেখানে মেয়েদের জন্য ক্রীড়া ছিলো অযাচিত। কিন্তু তার অটুট সংকল্প এবং যুবা ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত সুযোগগুলো তাকে এই বাঁধাগুলো অতিক্রম করার শক্তি জুগিয়েছিল। সীমা তার দক্ষতার মাধ্যমে শুধু ঝাড়খণ্ডে নয়, বরং দেশজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন এবং রাজ্য এবং জাতীয় পর্যায়ে খেলতে সুযোগ পান।
তাঁর উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল আন্তর্জাতিক যুব ফুটবল প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ। এটি তার জন্য নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করে এবং তার গ্রামসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বহু মেয়েকে তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করার জন্য প্রেরণা জোগায়। সীমা আজ একজন রোল মডেল হিসেবে স্থান পেয়েছেন, যিনি সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রেরণা দিয়েছেন।
সীমা কুমারী প্রমাণ করেছেন যে ক্রীড়া শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতা নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তনের শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে, যা মেয়েদের ঐতিহ্যগত ভূমিকা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং তাদের ক্ষমতার প্রতি আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। আজও সীমা ফুটবল খেলেন এবং অন্যান্য মেয়েদের স্বপ্ন দেখতে এবং তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে উৎসাহিত করেন।
তার জীবনগাথা প্রমাণ করে যে সঠিক সহায়তা এবং অটুট সংকল্প থাকলে, যে কেউ তার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন করতে পারে, তা সে যেখান থেকেই আসুক না কেন।