Indian Sports Legends Reflect: গোপীচাঁদ-সাক্ষী-বড়ুয়া-আনন্দের দৃষ্টিকোণে ভারতীয় ক্রীড়ার উত্থান-পতন

ভারতীয় ক্রীড়াজগত (Indian sports) বছরের পর বছর ধরে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। কখনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে, কখনো হতাশার গভীরে ডুব দিয়েছে। ৬ থেকে ৮ মার্চ কলকাতার (Kolkata) এক পাঁচ তাঁরা হোটেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে টাটা স্টীল ট্রেইলব্লেজার্স কনক্লেভের তৃতীয় বর্ষের অনুষ্ঠান (Tata Steel Trailblazers Conclave 3.0)।

এই কনক্লেভে অংশগ্রহণ করেছেন ভারতের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা৷ ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব—পুল্লেলা গোপীচাঁদ, সাক্ষী মালিক, দিব্যেন্দু বড়ুয়া এবং বিশ্বনাথন আনন্দ—তাদের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মুহূর্ত এবং ভারতীয় ক্রীড়ার বর্তমান অবস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাদের এই বক্তব্য ভারতীয় ক্রীড়ার শক্তি, দুর্বলতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার একটি চিত্র তুলে ধরেছে।

গোপীচাঁদের দৃষ্টিতে ব্যাডমিন্টনের উত্থান-পতন
ভারতের প্রখ্যাত ব্যাডমিন্টন কোচ পুল্লেলা গোপীচাঁদ ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে আমাদের সর্বনিম্ন সময় ছিল, ব্যাডমিন্টনে কোনো পদক জিততে পারিনি। ১৯৯৪ সালে কানাডায় কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় দল পাঠানো হয়নি, কারণ দলটি মানের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল। আর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিলাম ২০২২ সালে, যখন ভারত ডেভিস কাপ জিতেছিল।” তবে তিনি মনে করেন, ভারতীয় ক্রীড়ায় পদকের সংখ্যা বাড়ছে না এর পিছনে বড় কারণ রয়েছে।

গোপীচাঁদ বলেন, “জনসমক্ষে আমি সব সত্যি বলতে পারি না। সৎ উত্তরগুলো আমি ভারতীয় ব্যাডমিন্টন সংস্থা (BAI) এবং স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (SAI) গোপন আলোচনার জন্য রাখব। ক্রীড়া অনেক বড় হয়েছে, প্রতিভার প্রবাহ বেড়েছে, কিন্তু সিস্টেমে যে পরিবর্তন দরকার তা এখনো পুরোপুরি হয়নি। প্রতিভার ট্যাঙ্ক ভরা আছে, কিন্তু পাইপলাইন ও নল পরিষ্কার করতে হবে যাতে প্রবাহ ঠিক থাকে।” তিনি স্পষ্ট করেছেন যে ভারতীয় ক্রীড়ার সম্ভাবনা প্রচুর, কিন্তু প্রশাসনিক ও কাঠামোগত সমস্যা সমাধান না হলে পদকের সংখ্যা বাড়বে না।

সাক্ষীর ক্যারিয়ারের শীর্ষ ও তলানি
অলিম্পিক পদকজয়ী কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উঁচু ও নিচু মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “রিও অলিম্পিক ছিল আমার জীবনের সর্বোচ্চ মুহূর্ত। ভারত কোনো পদক পাচ্ছিল না, আমি সেই ভাঙন ঘটিয়েছিলাম। আর সর্বনিম্ন ছিল ২০২৩ সালে, যখন আমি কুস্তি ছেড়ে দিয়েছিলাম। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করছিলাম, আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। ৪০ দিন রাস্তায় ঘুমিয়েছি, কিন্তু কোনো শুনানি হয়নি। এমন পরিবেশে কুস্তি চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।” সাক্ষীর এই বক্তব্য ভারতীয় ক্রীড়ায় নারী খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা ও সমর্থনের অভাবের গভীর সমস্যাকে তুলে ধরেছে।

দাবাড়ুদের সাফল্যের গল্প
ভারতের প্রথম দাবা গ্র্যান্ডমাস্টারদের একজন দিব্যেন্দু বড়ুয়া তার ক্যারিয়ারের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, “আমার সর্বোচ্চ মুহূর্ত ছিল ১৯৯৯ সালে, যখন আমি দাবা অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জিতেছিলাম এবং গ্র্যান্ডমাস্টার উপাধি পেয়েছিলাম।” তার এই সাফল্য ভারতীয় দাবার জন্য একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছিল।

অন্যদিকে, দাবা জগতের কিংবদন্তি বিশ্বনাথন আনন্দ বলেন, “আমার সর্বোচ্চ কোনটা বেছে নেব জানি না, সব শিরোপাই আমার কাছে প্রিয়। তবে ২০০৭ সালের জয়টা বিশেষ ছিল। সর্বনিম্ন ছিল ২০১৩ সালে।” ভারতীয় দাবার বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “ভারত এখন শীর্ষে, কিন্তু সব খেলোয়াড় নয়। আমাদের শীর্ষে তিনজন আছেন, আর সবচেয়ে বয়স্কের বয়স ২০। এর মানে ভারত আগামী ২০ বছর দাবা উপভোগ করতে পারবে। কিন্তু মহিলা খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে একই অবস্থা নয়। তাদের স্তর উন্নত করতে আরও কাজ করতে হবে। আমাদের ক্ষমতা ও সম্ভাবনা প্রচুর, কিন্তু কাজ অনেক বাকি।”

ভারতীয় ক্রীড়ার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে ভারতীয় ক্রীড়ায় প্রতিভার অভাব নেই, কিন্তু প্রশাসনিক দুর্বলতা, সঠিক পরিকাঠামোর অভাব এবং খেলোয়াড়দের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির ব্যর্থতা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। গোপীচাঁদের মতে, প্রতিভার প্রবাহ থাকলেও তা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে হবে। সাক্ষী মালিকের অভিজ্ঞতা দেখায় যে নারী খেলোয়াড়দের জন্য ন্যায়বিচার ও সমর্থনের অভাব ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিতে পারে। অন্যদিকে, আনন্দ ও বড়ুয়ার মতো দাবাড়ুরা ভারতীয় দাবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন, তবে মহিলা খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্য আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

ভারতীয় ক্রীড়ার ইতিহাসে ২০১৬ সালে সাক্ষীর রিও অলিম্পিক পদক, ২০২২ সালে ডেভিস কাপ জয়ের মতো সাফল্য উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু ১৯৮০-৯০ দশকের ব্যাডমিন্টনে পদকশূন্যতা বা ২০২৩ সালে কুস্তিগীরদের প্রতিবাদের মতো ঘটনা আমাদের সামনে বড় প্রশ্ন তুলে ধরে। সম্প্রতি, ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রতিভার প্রবাহ বাড়লেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রশাসন ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।

ভারতীয় ক্রীড়ার এই যাত্রায় গোপীচাঁদের মতো কোচ, সাক্ষীর মতো খেলোয়াড় এবং আনন্দ-বড়ুয়ার মতো কিংবদন্তিরা আমাদের গর্ব। তাদের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বলে যে ভারতের ক্রীড়ার সম্ভাবনা অপার, কিন্তু সাফল্যের পথে বাধাগুলো দূর করতে হবে। আগামী দিনে ভারতীয় ক্রীড়া যেন আরও উচ্চতায় পৌঁছায়, সেই প্রত্যাশা রাখাই যায়।

Related Posts

Khelo India Winter Games: গুলমার্গে সেনাবাহিনী ও লাদাখের তীব্র লড়াই

খেলো ইন্ডিয়া উইন্টার গেমস ২০২৫-এর (Khelo India Winter Games) দ্বিতীয় পর্ব রবিবার, ৯ মার্চ, জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমার্গের মনোরম কংডুরি ঢালে শুরু হতে চলেছে। এই…

Asian Women’s Kabaddi Championship: ওম্যান্স কবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের জয়

এশিয়ান কবাডি ফেডারেশন ২০২৫ সালের ৬ষ্ঠ এশিয়ান ওম্যান্স কবাডি চ্যাম্পিয়নশিপের (Asian Women’s Kabaddi Championship) সূচি ঘোষণা করেছে। আট বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্ট…