Sunil Chhetri comeback: অবসর ভেঙে সুনীলের প্রত্যাবর্তনে ‘গর্জে’ উঠলেন সন্তোষজয়ী কোচ

ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri) আন্তর্জাতিক অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই খবর ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও, বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। শুক্রবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত টাটা স্টিল ট্রেইলব্লেজার্স ৩.০ ক্রীড়া সম্মেলনে এই বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়। সম্মেলনের একটি অধিবেশনের শিরোনাম ছিল—‘এমবিএসজি: এটি কি সর্বকালের সেরা আইএসএল দল?’। আলোচনা শুরু হয় মোহনবাগানের প্রসঙ্গে, এবং অনিবার্যভাবে তা ইস্টবেঙ্গলের দিকে মোড় নেয়। তবে সবচেয়ে বড় চমক ছিল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন মতামত।

মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের প্রসঙ্গ
মোহনবাগানের প্রাক্তন জেনারেল সেক্রেটারি সঞ্জয় বোস আলোচনায় দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আইএসএলে এটি সেরা মোহনবাগান দল। তবে এটিকে সর্বকালের সেরা বলা যায় কি না, তা বলতে পারি না। অতীতে মোহনবাগানের অনেক দুর্দান্ত দল ছিল। এই ক্লাব কিংবদন্তি খেলোয়াড় তৈরি করেছে।” তিনি আরও জানান, ২০২০ সালে আরপিএসজি গ্রুপের সঙ্গে মোহনবাগানের সম্পর্ক ক্লাবটির জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আরপিএসজি গ্রুপের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েঙ্কার নেতৃত্বে মোহনবাগান আইএসএলে প্রবেশ করে এবং সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে। সঞ্জয় গোয়েঙ্কার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।

অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গলের কিংবদন্তি আলভিটো ডি’কুনহা ক্লাবটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ইস্টবেঙ্গলের সংস্কৃতি বদলানো দরকার। পুরনো দিনের মতো আর চলতে পারে না, এখন কর্পোরেটরা এসেছে। বাচ্চারা মোহনবাগানের দিকে ঝুঁকছে কারণ তারা ফলাফল দেখতে চায়। আমি আশা করি ইস্টবেঙ্গলের দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রুত পরিবর্তন আসবে।” আলভিটোর এই মন্তব্য কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন ফেলেছে, যারা দুই ক্লাবের মধ্যে চিরকালীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী।

প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার সৈয়দ রহিম নবী মোহনবাগানের সাফল্যের রহস্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মোহনবাগান সফল হয়েছে কারণ তারা তাদের মূল খেলোয়াড়দের ধরে রেখেছে। ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড় নির্বাচনে ভুল করেছে।” নবীর এই বিশ্লেষণ বাংলার ফুটবল মহলে ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়েছে।

সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন: সমর্থন ও সমালোচনা
আলোচনার মোড় ঘুরে যায় যখন সুনীল ছেত্রীর আন্তর্জাতিক অবসর থেকে ফিরে আসার প্রসঙ্গ উঠে আসে। ৪০ বছর বয়সে ছেত্রী জাতীয় দলে ফিরছেন, এবং এটি ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আই-লিগ জয়ী কোচ সঞ্জয় সেন স্পষ্টভাবে বলেন, “এটি ভারতীয় ফুটবলে প্রতিভার অভাব দেখায়। গত ১০ বছরে আমাদের ফুটবল এক ইঞ্চিও এগোয়নি।” তাঁর এই মন্তব্যে ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে উদ্বেগ আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

আলভিটো ডি’কুনহা এবং সৈয়দ রহিম নবী উভয়েই এই সিদ্ধান্তকে ‘পিছিয়ে যাওয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আলভিটো বলেন, “এটি একটি পশ্চাদগামী পদক্ষেপ। আমাদের নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করা উচিত ছিল।” নবীও একমত হয়ে বলেন, “ছেত্রী অসাধারণ খেলোয়াড়, কিন্তু এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভালো বার্তা দেয় না।” তাঁদের মতে, ছেত্রীর ফিরে আসা ভারতীয় ফুটবলের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদি সমাধান হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কিন্তু মোহনবাগানের কিংবদন্তি জোসে ব্যারেটো এই প্রত্যাবর্তনের ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “তরুণ খেলোয়াড়রা ছেত্রীর অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হবে। তিনি দলে থাকলে নতুনরা অনেক কিছু শিখতে পারবে।” ব্যারেটোর এই মত ফুটবল মহলে একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ যোগ করেছে।

ছেত্রীর প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর ছেত্রী আবার জাতীয় দলে ফিরছেন মার্চে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচের জন্য। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচটি এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর যোগ্যতা অর্জন পর্বের অংশ। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জয়হীন ভারতীয় দলের জন্য ছেত্রীর ফিরে আসা একটি আশার আলো হতে পারে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি ভারতীয় ফুটবলের প্রতিভা উন্নয়নে ব্যর্থতার প্রতিফলন।

ছেত্রী ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়। তিনি আইএসএলে বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে এই মরশুমে ১২ গোল করেছেন। ৪০ বছর বয়সেও তাঁর ফর্ম অসাধারণ, এবং তাঁর নেতৃত্ব গুণ অতুলনীয়। তবে প্রশ্ন উঠছে—ছেত্রীর পর কে?

বাংলার ফুটবলের প্রতিচ্ছায়া
কলকাতার ফুটবলের প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা আরও গভীর। মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবগুলো বাংলার ফুটবলের গর্ব। সঞ্জয় বোসের মতে, মোহনবাগানের সাফল্য কর্পোরেট সমর্থন এবং ধারাবাহিকতার ফল। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের সংগ্রাম নতুন প্রজন্মের সমর্থকদের হতাশ করছে। আলভিটোর মন্তব্যে স্পষ্ট, ইস্টবেঙ্গলকে আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের জন্যও মিশ্র অনুভূতি এনেছে। একদিকে তাঁর ফিরে আসা আনন্দের, অন্যদিকে এটি জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে ছেত্রী কীভাবে পারফর্ম করেন, তা বাংলার সমর্থকদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ।

টাটা স্টিল ট্রেইলব্লেজার্স ৩.০ সম্মেলনে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের পাশাপাশি ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর চিন্তার সুযোগ করে দিয়েছে। সঞ্জয় সেন ও নবীর সমালোচনা যেমন বাস্তবতার প্রতিফলন, তেমনি ব্যারেটোর আশাবাদ নতুন প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হতে পারে। ছেত্রীর ফিরে আসা ভারতীয় ফুটবলকে স্বল্পমেয়াদে শক্তি দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে নতুন প্রতিভা গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ এখনও অমীমাংসিত।

Related Posts

East Bengal FC: আর্কাদাগের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী কোচ ব্রুজো

এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের (AFC Challenge League) কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে তুর্কমেনিস্তানের এফসি আর্কাদাগের (FC Arkadag)  বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ০-১ গোলে পরাজয়ের পর সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই…

Neymar JR: নেইমারের ফর্মে উজ্জ্বল সান্তোস, ম্যাচে খেলার সম্ভাবনা

এটি প্রায় নিশ্চিত যে, সান্তোস (Santos) এবং করিন্থিয়ান্সের (Corinthians) ম্যাচে কোন দলই ক্লিন শিট নিয়ে শেষ করবে না। এই দুই দলের সেমি-ফাইন ফলাফল বেশ রোমাঞ্চকর…