
পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের (PCB) পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। জাতীয় পুরুষ দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইতিবাচক ফলাফল আনতে ব্যর্থ হচ্ছিল। ২৯ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Champions Trophy) আয়োজন করতে গিয়ে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB)। বোর্ডের আর্থিক অবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করে পিসিবি ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮৬৯ কোটি ভারতীয় টাকা) ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অথচ এই টুর্নামেন্টে তারা মাত্র একটি ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলেছে।
টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের যাত্রা শুরু হয়েছিল গ্রুপ এ-তে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে লাহোরে। সেই ম্যাচে তারা হেরে যায়। এরপর দুবাইতে ভারতের মুখোমুখি হয়ে আরও একটি পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। তৃতীয় এবং শেষ গ্রুপ ম্যাচটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বৃষ্টির কারণে একটি বলও না খেলে বাতিল হয়ে যায়। নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের কাছে হারের ফলে পাকিস্তান টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায়। ফলে তাদের প্রচারণা শেষ হয় মাত্র একটি ঘরের মাঠের ম্যাচ দিয়ে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (Champions Trophy) জন্য তিনটি ভেন্যু—রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর এবং করাচি—আপগ্রেড করতে প্রায় ১৮ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি (৫৮ মিলিয়ন ডলার) খরচ করেছে। এই আপগ্রেডেশনের খরচ প্রত্যাশিত বাজেটের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি হয়েছে। এছাড়াও, ইভেন্ট প্রস্তুতির জন্য পিসিবি আরও ৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এই বিপুল বিনিয়োগের তুলনায় তাদের আয় ছিল নগণ্য। হোস্টিং ফি হিসেবে পিসিবি মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। টিকিট বিক্রি এবং স্পনসরশিপ থেকে আয়ও উল্লেখযোগ্য ছিল না। ফলে রিপোর্টে উপসংহার টানা হয়েছে যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করে পিসিবি ৮৫ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মুখে পড়েছে। যা ভারতীয় টাকায় ৮৬৯ কোটি ভারতীয় টাকা।
এই ক্ষতির প্রভাব পিসিবি-র (PCB)পরবর্তী পরিকল্পনায় স্পষ্ট হয়েছে। বোর্ড জাতীয় টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ ফি ৯০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। রিজার্ভ খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকও ৮৭.৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, পিসিবি সম্প্রতি ম্যাচ ফি ৪০,০০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০,০০০ টাকাতে নামিয়েছে। কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই। তবে পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নকভি হস্তক্ষেপ করে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন। বোর্ডের ডোমেস্টিক ক্রিকেট বিভাগকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি খেলোয়াড়দের জন্য পাঁচ তারকা হোটেলের ব্যবস্থা বাতিল করে ইকোনমি হোটেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এই আর্থিক সংকট পাকিস্তান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একদিকে মাঠে দলের ব্যর্থতা, অন্যদিকে এই বিপুল ক্ষতি—পিসিবি-র জন্য এটি একটি দুঃসময়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য করা বিনিয়োগের তুলনায় আয়ের এই বিশাল ব্যবধান বোর্ডের পরিচালনার দুর্বলতাকেও প্রকাশ করেছে। টুর্নামেন্টে মাত্র একটি ঘরের মাঠের ম্যাচ খেলে এত বড় ক্ষতি ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়েছে।