Mushfiqur Rahim Retires: একদিনের ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন মুশফিকুর রহিম

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম (Mushfiqur Rahim) ওয়ানডে আন্তর্জাতিক (ওডিআই) ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চে বাংলাদেশের হতাশাজনক প্রদর্শনের পর গত বুধবার তিনি তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেন। ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা ক্রিকেটার জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহ তার জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল, এবং এই অবসরের সিদ্ধান্ত তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

মুশফিকুর তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, “আজ থেকে আমি ওডিআই ফরম্যাট থেকে অবসর নিচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছুর জন্য। বিশ্ব মঞ্চে আমাদের সাফল্য হয়তো সীমিত ছিল, কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত—যখনই আমি আমার দেশের জন্য মাঠে নেমেছি, আমি শতভাগেরও বেশি উৎসর্গ ও সততার সঙ্গে খেলেছি।” তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহ আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল। আমি উপলব্ধি করেছি, এটাই আমার ভাগ্য। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন: ‘আপনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমান করেন’ (সূরা আল-ইমরান, ৩:২৬)। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন এবং সবাইকে সৎ ঈমান দান করুন।”

মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম দীর্ঘসময় ধরে খেলা ক্রিকেটার এবং টাইগারদের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়দের একজন। ২০০৬ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে বাংলাদেশের পঞ্চম ওডিআই ম্যাচে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন। সেই ম্যাচে তিনি ব্যাটিং বা উইকেটকিপিংয়ে নিজের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ না পেলেও, এটিই ছিল তার ওডিআই ক্যারিয়ারের প্রথম ধাপ। এরপর ১৯ বছরের দীর্ঘ পথচলায় তিনি বাংলাদেশের ওডিআই ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

একটি গৌরবময় ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
মুশফিকুর তার ওডিআই ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ২৭৪টি ম্যাচে ৭,৭৯৫ রানের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে। তার ব্যাটিং গড় ৩৬.৪২, যেখানে রয়েছে ৯টি শতক এবং ৪৯টি অর্ধশতক। তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন, যেখানে তামিম ইকবাল ৮,৩৫৭ রান নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন। উইকেটকিপার হিসেবেও তার অবদান অসাধারণ—২৪৩টি ক্যাচ এবং ৫৬টি স্টাম্পিং তার দক্ষতার প্রমাণ।

তার শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিনি আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে ভারতের অক্ষর প্যাটেলের বলে গোল্ডেন ডাকের শিকার হন। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মাইকেল ব্রেসওয়েলের কাছে মাত্র ২ রানে আউট হন। রাওয়ালপিন্ডিতে বৃষ্টির কারণে তার শেষ ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়, এবং এর মাধ্যমেই তার ওডিআই ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে মুশফিকের অবদান
মুশফিকুর রহিম শুধু একজন ক্রিকেটার নন, তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি প্রতীক। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক ঐতিহাসিক জয় অর্জন করেছে। তিনি দলের অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কঠিন সময়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। তার শান্ত স্বভাব, মাঠে ধৈর্যশীল পারফরম্যান্স এবং উইকেটের পিছনে তীক্ষ্ণ দক্ষতা তাকে সমসাময়িক ক্রিকেটারদের মধ্যে আলাদা করে তুলেছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে মুশফিক একটি আবেগের নাম। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার প্রথম ওডিআই শতক থেকে শুরু করে ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স—তার ক্যারিয়ারে এমন অনেক মুহূর্ত রয়েছে যা সমর্থকদের মনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

ভক্ত ও সতীর্থদের প্রতিক্রিয়া
মুশফিকের অবসরের ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তরা তাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। একজন ভক্ত লিখেছেন, “মুশফিক ভাই, আপনি আমাদের হিরো। আপনার অবদান কখনো ভোলা যাবে না।” আরেকজন লিখেছেন, “একটি যুগের অবসান। ধন্যবাদ, মুশফিক, আমাদের গর্বিত করার জন্য।”

তার সতীর্থ তামিম ইকবালও তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “মুশফিকের সঙ্গে খেলা আমার জন্য গর্বের বিষয়। তার মতো সততা ও উৎসর্গ খুব কম খেলোয়াড়ের মধ্যে দেখা যায়। তার জন্য শুভকামনা।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মুশফিক ওডিআই থেকে অবসর নিলেও তিনি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাবেন কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তিনি তার পরিবার, বন্ধু এবং ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যাদের জন্য তিনি গত ১৯ বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি আমার পরিবার, বন্ধু এবং ভক্তদের গভীরভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আপনাদের সমর্থন আমার শক্তি ছিল।”
উপসংহার

মুশফিকুর রহিমের ওডিআই ক্যারিয়ার শেষ হলেও তার উত্তরাধিকার বাংলাদেশ ক্রিকেটে চিরকাল বেঁচে থাকবে। তিনি যে নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের উদাহরণ স্থাপন করেছেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তার নাম সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

Related Posts

Champions Trophy 2025: ‘আমরাও খেলতে এসেছি’, কুলদীপের স্পিনে কিউই ধস

নিউজিল্যান্ডের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে (ICC Champions Trophy 2025) ব্যাট হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হওয়ার কথা ছিল রাচিন রবীন্দ্র (Rachin Ravindra) এবং কেন উইলিয়ামসনের (Kane…

Champions Trophy 2025: ভনের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভবিষ্যদ্বাণীতে জাফর দেখাল ‘লঙ্কা-লেবু’!

খেলার দিনগুলোতে ওয়াসিম জাফর (Wasim Jaffer) এবং মাইকেল ভন (Michael Vaughan) মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা এর চেয়েও বেশি। ভারতের প্রাক্তন ওপেনার…