MS Dhoni: ‘কোচিং ক্যারিয়ার শেষ’! কেন হাসিকে ধমক দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কুল

এমএস ধোনি (MS Dhoni) মাঠে এবং মাঠের বাইরে তাঁর শান্ত স্বভাবের জন্য ‘মিস্টার কুল’ নামে পরিচিত। তীব্র চাপের পরিস্থিতিতেও তিনি স্থির থাকেন। তবে, বিরল কিছু মুহূর্তে ধোনির অন্য একটি রূপ দেখা গেছে, যখন তিনি রেগে গিয়ে কাউকে ধমক দিয়েছেন। সম্প্রতি চেন্নাই সুপার কিংস (সিএসকে)-এর ব্যাটিং কোচ মাইকেল হাসি ২০১৮ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এর একটি ঘটনার কথা স্মরণ করেছেন, যখন ধোনি তাঁর ওপর রেগে গিয়েছিলেন। এই ঘটনা হাসিকে এতটাই হতবাক করেছিল যে তিনি ভেবেছিলেন তাঁর কোচিং ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।

২০১৮ সালের আইপিএল ছিল হাসির জন্য প্রথম মরশুম হিসেবে সিএসকে-তে ব্যাটিং কোচের ভূমিকায়। দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার পর সেই বছরই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি লিগে ফিরেছিল। প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ব্যাটার হাসি জানিয়েছেন, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের (এসআরএইচ) বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে আফগানিস্তানের তারকা স্পিনার রশিদ খানের বলে ধোনি আউট হওয়ার পর তিনি তাঁর ওপর রেগে যান। এই ঘটনাটি আইপিএল ২০১৮-এর কোয়ালিফায়ার ১ ম্যাচে ঘটেছিল।

ঘটনার পটভূমি
হাসি জানান, ম্যাচের আগের রাতে দলের বিশ্লেষক তাঁকে রশিদ খানের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে একটি ভিডিও পাঠিয়েছিলেন। ভিডিওটিতে দেখানো হয়েছিল যে রশিদ যখন ভুল ডেলিভারি (রং’আন) করেন, তখন তাঁর আঙুল একসঙ্গে থাকে, আর লেগ স্পিন করার সময় আঙুলগুলো আলাদা থাকে। “এটা দেখে আমি ভাবলাম, ‘ওহ, এটা ভালো তথ্য।’ কিন্তু এটা ম্যাচের আগের রাতের কথা। আমি এক ঘণ্টা ধরে ভাবলাম, এটা ব্যাটারদের পাঠাবো কি না। ম্যাচের আগের রাতে অনেক তথ্য দেওয়া ঠিক নয়,” হাসি ‘ব্যাকচ্যাট পডকাস্ট’-এ বলেন।

শেষ পর্যন্ত হাসি সিদ্ধান্ত নেন এই তথ্যটি ব্যাটিং গ্রুপের সঙ্গে শেয়ার করার। তিনি ভেবেছিলেন, এটি না পাঠালে তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটি ধোনির ক্ষেত্রে উল্টো ফল দিয়েছিল।

ম্যাচের দিন ধোনির রাগ
ম্যাচের দিন সিএসকে চার উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে। ধোনি ফাফ ডু প্লেসির সঙ্গে ক্রিজে আসেন। রশিদ খান বল করতে এলে প্রথম বলেই তিনি একটি ভুল’আন করেন। ধোনি কভার ড্রাইভ খেলতে গিয়ে স্পিনের বিরুদ্ধে শট খেলেন এবং বল তাঁর স্টাম্পে আঘাত করে। হাসি বলেন, “আমি ভাবলাম, ‘ওহ, ঠিক আছে, কোনো সমস্যা নেই।’ কিন্তু ধোনি মাঠ থেকে সোজা ডাগআউটে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি আমার নিজের মতো ব্যাট করব, ধন্যবাদ।’ তারপর আমার পাশে বসে পড়লেন। আমি ভাবলাম, ‘কোচিং ক্যারিয়ার শেষ!’ পুরো ম্যাচটা আমি হতবাক হয়ে বসে রইলাম।”

ধোনি সেই ম্যাচে ১৮ বলে মাত্র ৯ রান করে আউট হন। তাঁর এই প্রতিক্রিয়া হাসির জন্য একটি চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি বলেন, “ধোনি একজন মেগাস্টার, যিনি ভগবানের মতো। তাঁর এমন রাগ আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।” হাসির মনে হয়েছিল, তাঁর প্রথম মরশুমেই কোচ হিসেবে তিনি ব্যর্থ হয়ে গেছেন।

ধোনির পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ও সিএসকে-র জয়
যদিও ধোনি আউট হয়ে যান, সিএসকে সেই ম্যাচে ফাফ ডু প্লেসির অপরাজিত ৬৭ রানের (৪২ বলে) দুর্দান্ত ইনিংসের সুবাদে ১৪০ রানের লক্ষ্য দুই উইকেটে হারিয়ে তাড়া করে ফাইনালে ওঠে। ফাইনালেও সিএসকে এসআরএইচ-এর মুখোমুখি হয় এবং ৮ উইকেটে জয়ী হয়ে ২০১৮ সালের আইপিএল শিরোপা জেতে। শেন ওয়াটসনের অপরাজিত সেঞ্চুরি (১১৭ রান, ৫৭ বলে) ফাইনালটিকে একপেশে করে দেয়।

ম্যাচের পর ধোনি শান্ত হয়ে হাসির কাছে যান এবং পরিস্থিতি বোঝান। হাসি বলেন, “ধোনি পরে এসে আমার সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, ‘তথ্যটা ভালো ছিল, কিন্তু আমার এটা প্রক্রিয়া করতে এবং নেটে প্র্যাকটিস করতে আরও সময় লাগত।’” এই কথোপকথন হাসির মনে আশার সঞ্চার করে। তিনি বুঝতে পারেন, ধোনি তথ্যের বিরোধী ছিলেন না, বরং তিনি এটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।

সিএসকে-র সাফল্য ও হাসির কোচিং
২০১৮ সালের আইপিএল জয় সিএসকে-র জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার পর ফিরে এসে তারা তৃতীয় শিরোপা জেতে। এরপর ২০২১ এবং ২০২৩ সালে আরও দু’বার আইপিএল জিতে সিএসকে মোট পাঁচটি শিরোপা নিয়ে সবচেয়ে সফল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে শীর্ষে উঠে আসে। ধোনির নেতৃত্বে দলটি আইপিএল-এ একটি শক্তিশালী উপস্থিতি গড়ে তুলেছে।

হাসি, যিনি ২০০৮ থেকে ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে সিএসকে-র হয়ে খেলেছেন, ২০১৮ সালে কোচ হিসেবে দলের সঙ্গে যোগ দেন। এই ঘটনা তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতে একটি পরীক্ষা হলেও, ধোনির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অটুট থাকে। বর্তমানে তিনি সিএসকে-র সঙ্গে সপ্তম মরশুম পর্যন্ত কোচিং করছেন।

ধোনির চরিত্র ও ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
ধোনি তাঁর শান্ত স্বভাবের জন্য বিখ্যাত। তবে, এই ঘটনা দেখায় যে তিনি মাঝে মাঝে তাঁর মত প্রকাশে দৃঢ় হতে পারেন। ভক্তরা সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। একজন ভক্ত লিখেছেন, “ধোনির এই দিকটা দেখে অবাক লাগলেও, এটাই তাঁকে এত বড় তারকা করেছে।” আরেকজন বলেন, “হাসির জন্য এটা কঠিন মুহূর্ত হলেও, ধোনি পরে তাঁর মহানুভবতা দেখিয়েছেন।”

ধোনি এবং হাসি উভয়েই সিএসকে-র সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ঘটনা তাঁদের সম্পর্কে একটি মানবিক দিক তুলে ধরে। ধোনির এই প্রতিক্রিয়া তাঁর স্বাধীন চিন্তাভাবনা এবং খেলার প্রতি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ। হাসির জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় মুহূর্ত ছিল, যা তাঁকে ধোনির মতো তারকার সঙ্গে কাজ করার কৌশল বুঝতে সাহায্য করেছে।

আইপিএল ২০১৮-এর তাৎপর্য
২০১৮ সালের আইপিএল সিএসকে-র জন্য একটি ফিরে আসার গল্প ছিল। নিষেধাজ্ঞার পর ফিরে এসে তারা শিরোপা জিতে ভক্তদের হৃদয় জয় করে। ধোনির নেতৃত্ব এবং ওয়াটসনের ফাইনালে সেঞ্চুরি দলটিকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল। এই ঘটনা সত্ত্বেও, ধোনি এবং হাসির মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে, যা সিএসকে-র পরবর্তী সাফল্যে প্রতিফলিত হয়েছে।

এই ঘটনা ভারতীয় ফুটবল ও ক্রিকেট প্রেমীদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ধোনির এই বিরল রাগ তাঁর মানবিক দিকটি প্রকাশ করে, যা তাঁর ‘কুল’ ইমেজের বাইরে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।

  • Related Posts

    Nita Ambani on India’s Win: চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়কে ঐতিহাসিক বলে নীতার শুভেচ্ছা ‘বয়েজ ইন ব্লু’কে

    ভারতীয় ক্রিকেট দল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪ উইকেটের দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ইতিহাস গড়েছে। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার অনুষ্ঠিত এই…

    Champions Trophy 2025: মোদীর তৃতীয় দফায় ICC-খরা কাটছে ভারতের

    ২০০৭ সালে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ৷ এগারোতে বিশ্বকাপ৷ তেরোতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি৷ মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে তখন আইসিসির সব ট্রফি৷ তবে তেরোতেই যেন শেষ৷ তারপর আইসিসি…

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *