Gautam Gambhir: গৌতম গম্ভীরের সামনে আগামী দুই বছরের ‘কঠিন’ চ্যালেঞ্জ!

গৌতম গম্ভীরকে (Gautam Gambhir) যাঁরা চেনেন, তাঁরা তাঁকে “একঘেয়েমি ধারাবাহিকতার প্রতীক” বলে বর্ণনা করেন। গত ২০ বছরে তিনি তাঁর খাদ্যাভ্যাসেও কোনও পরিবর্তন আনেননি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা তাঁর কাছে অচিন্তনীয়। নৈমিত্তিক সমাবেশে তিনি ডেনিম পরতে ভালোবাসেন, এবং এই অভ্যাসও বছরের পর বছর অপরিবর্তিত। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষেত্রে তাঁর মন সবসময় সক্রিয় থাকে, কৌশলগত সমস্যার সমাধান খুঁজতে তিনি অবিরাম চিন্তা করেন। রাহুল দ্রাবিড়ের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে কোচিংয়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত জুলাই থেকে গম্ভীর ভারতীয় জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই আট মাসে দিল্লির ওল্ড রাজিন্দর নগরের এই ক্রিকেটার হৃদয়বিদারক পরাজয় থেকে শুরু করে অবিশ্বাস্য সাফল্য—সবই দেখেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উচ্চতা থেকে ছয়টি টেস্টে হারের নিম্নতম পর্যায়—তিনি উভয় প্রান্তই অনুভব করেছেন।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জয় গম্ভীরের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস এনেছে। ‘গুরু গম্ভীর’ এখন বড় ছবিটি বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাবেন, কারণ আগামী দুই গুরুত্বপূর্ণ বছরে ভারতীয় ক্রিকেটে বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। তাঁর প্রবেশনারি সময় শেষ হয়েছে বলা যায়, এবং এখন তিনি এমন একটি পর্যায়ে প্রবেশ করছেন যেখানে তাঁর সামনে তিনটি স্বতন্ত্র চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমটি হল ইংল্যান্ডের টেস্ট সফর, যা টি-টোয়েন্টির জাঁকজমকপূর্ণ আইপিএলের ঠিক পরে শুরু হবে, প্রস্তুতির জন্য কোনও সময় না দিয়ে।

দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হল ২০২৬ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, যেখানে সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে ভারত তাদের শিরোপা রক্ষা করবে। এবং শেষ, কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, ২০২৭ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ দক্ষিণ আফ্রিকায়, যা হবে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।

Also Read |  “এই কাপের স্বাদ…” বরুণের পোস্টে হইচই শুরু, নিশানা নাকি কটাক্ষের জবাব?  

টি-টোয়েন্টিতে গম্ভীরের সাফল্য

ফরম্যাট অনুযায়ী গম্ভীরের কোচিং বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি টি-টোয়েন্টি দলের জন্য ইতিমধ্যে একটি শক্তিশালী কোর তৈরি করেছেন, যেখানে সূর্যকুমার যাদব নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি এবং রবীন্দ্র জাদেজা টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও তাদের অনুপস্থিতি খুব একটা অনুভূত হয়নি। ভারতের নতুন ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বব্যাপী ভক্তদের আকর্ষণ করছে। গম্ভীর অভিষেক শর্মার মতো একটি রত্ন আবিষ্কার করেছেন। বরুণ চক্রবর্তী এবং জসপ্রীত বুমরাহ’র আট ওভার বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের জন্য দুঃস্বপ্ন হবে। সঞ্জু স্যামসন তাঁর ফর্ম খুঁজে পেয়েছেন, যদিও ঋষভ পন্থ এবং যশস্বী জয়সওয়ালও দলে থাকবেন।

আর্শদীপ সিং পাওয়ারপ্লেতে উইকেট শিকারী হিসেবে দুর্দান্ত, এবং হার্দিক পান্ড্য, নীতিশ কুমার রেড্ডি এবং শিবম দুবে’র মতো তিনজন সিম অলরাউন্ডার দলে রয়েছেন। সূর্যকুমার, অক্ষর প্যাটেল এবং হার্দিক এই দলের পুরোনো সৈনিক। এটি এমন একটি দল যা সব দিক থেকে প্রস্তুত এবং সামান্য পরিবর্তনের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে।

ওডিআই এবং টেস্টে চ্যালেঞ্জ
কিন্তু অন্য দুটি ফরম্যাটে গম্ভীরের কৌশলী মন, শৃঙ্খলা এবং মানুষ-পরিচালনার দক্ষতা একত্রিত করতে হবে। রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি ওডিআই থেকে অবসরের কথা এখনও ভাবছেন না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুজনেই ভালো পারফর্ম করেছেন। কিন্তু ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে গম্ভীর চারজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার ব্যবহার করে ২৪০-২৫০ রানের ম্যাজিক তৈরি করার সুযোগ পাবেন না। স্কোর বেশি হবে, এবং প্রশ্ন উঠছে—রোহিতের সংক্ষিপ্ত ও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং কোহলির এখনকার অ্যাঙ্কর ভূমিকা কি যথেষ্ট হবে?

রোহিত বলেছেন, তিনি অবসর নেবেন না, তবে ২০২৭ বিশ্বকাপে খেলবেন কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত নন। এখানে গম্ভীরকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। তাঁর ‘দল প্রথম’ দর্শন অপরিবর্তিত থাকবে। তিনি সুপারস্টার সংস্কৃতি পছন্দ করেন না, কিন্তু পারফরমারদের প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে, যা বয়সের উপর নির্ভর করে না। বিসিসিআই এবং জাতীয় নির্বাচন কমিটির কাছে রোহিতের ওডিআই ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্টতা চাওয়া তাঁর পক্ষে আশ্চর্যজনক হবে না, কারণ বিশ্বকাপের আগে মাত্র ২৭টি ওডিআই ম্যাচ রয়েছে।

পরবর্তী অধিনায়ক কে হবেন, সেটাও একটি বড় প্রশ্ন। শুভমান গিল ওডিআই-তে দুর্দান্ত এবং রোহিতের ডেপুটি, কিন্তু হার্দিক পান্ড্যও একজন ভালো নেতা, যিনি কোচের কৌশল পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেন। গুজরাট টাইটান্সে অশিষ নেহরার সঙ্গে তিনি তা প্রমাণ করেছেন।

টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা
নিকট ভবিষ্যতে গম্ভীরকে টেস্ট দল নিয়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। যদি রোহিত খেলেন এবং জয়সওয়াল ও কেএল রাহুল শীর্ষ তিনে থাকেন, তবে শুভমান গিলের জায়গা কোথায় হবে? জসপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি এবং মোহাম্মদ সিরাজ—এই তিন পেসার কি ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য সেরা ফর্মে থাকবেন, যেখানে সুইং এবং সিম গুরুত্বপূর্ণ হবে? আর মিডল অর্ডারের সেই একটি জায়গা, যা ভারতের দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার কী হবে? করুণ নায়ার কি ফিট হবেন, নাকি শ্রেয়স আইয়ার টেস্টে জায়গা ফিরে পাবেন? ‘গুরু গম্ভীর’-এর সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত রয়েছে, তবে তিনি কখনও সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাননি।

গম্ভীরের দর্শন ও ভবিষ্যৎ
গম্ভীরের কোচিং দর্শন স্পষ্ট—দলের জন্য সবকিছু। তিনি তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণে ভারসাম্য রাখতে পারেন। টি-টোয়েন্টিতে তিনি ইতিমধ্যে সাফল্য পেয়েছেন, কিন্তু ওডিআই এবং টেস্টে তাঁর কৌশল পরীক্ষিত হবে। ইংল্যান্ড সফর, ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৭ ওডিআই বিশ্বকাপ—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ তাঁর কোচিং কেরিয়ারের মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।

অভিষেক শর্মা, নীতিশ রেড্ডি’র মতো তরুণদের সঙ্গে রোহিত, কোহলি’র মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে গম্ভীর কীভাবে এগিয়ে যান, সেটাই দেখার বিষয়। তাঁর ‘বিরক্তিকর ধারাবাহিকতা’ এবং ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তা ভারতকে আগামী দুই বছরে কতটা সাফল্য এনে দেয়, সেটা সময়ই বলবে। ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা ‘গুরু গম্ভীর’-এর উপর ভরসা রেখে অপেক্ষায় রয়েছেন।

  • Related Posts

    IPL 2025: ঋষভের উত্তরসূরী কে? রাহুলের মন্তব্যে বাড়ল জল্পনা

    আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025)-এর প্রস্তুতি এখন পুরোদমে চলছে। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের নিজ নিজ রাজ্যে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করছে। দিল্লি ক্যাপিটালস (Delhi Capitals) ছাড়া বাকি সব…

    Shreyas Iyer: ‘ট্রফি জিতিয়েও যে স্বীকৃতি চেয়েছিলাম তা পাইনি’ বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি শ্রেয়াসের

    গত বছরে শ্রেয়াস আইয়ারের (Shreyas Iyer) জীবন উত্থান-পতন চলছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা থেকে বাদ পড়া থেকে শুরু করে কলকাতা নাইট রাইডার্সের…