
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এবার হোলির উৎসবে (Australia Holi celebration) এক অনন্য উদ্যোগ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করেছে। হোলির রঙিন উৎসব উপলক্ষে তারা শুধু শুভেচ্ছাই জানায়নি, বরং ২০২৩ সালের আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপের ট্রফি মেলবোর্নের হোলি অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এক অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি করেছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার একটি বিবৃতি অনুযায়ী, ভক্তরা এই আইকনিক ট্রফির সঙ্গে সেলফি ও ছবি তুলে উৎসবের আনন্দকে দ্বিগুণ করেছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিগ ব্যাশ লিগ (BBL) এবং উইমেন্স বিগ ব্যাশ লিগ (WBBL)-এর মার্চেন্ডাইজ, যার মধ্যে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার টুপিও ছিল। এই উদ্যোগ রঙের উৎসবে ক্রিকেটের উন্মাদনা মিশিয়ে দিয়েছে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপ তাদের বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং ক্রিকেটের চেতনাকে মাঠের বাইরেও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। এটি তাদের মাল্টিকালচারাল অ্যাকশন প্ল্যানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার লক্ষ্য ক্রিকেটে বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি ও বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করা। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা, যারা ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের পরাজয়ের ক্ষত এখনও ভোলেনি, তারাও এই উদ্যোগে ক্রিকেটের এই নতুন মাত্রার প্রশংসা করছেন।
২০২৩ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ভারতের বিরুদ্ধে একটি অবিস্মরণীয় জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন এবং ভারতকে ৫০ ওভারে ২৪০ রানে গুটিয়ে দেন। ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন পিচে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৩১ বলে ৪৭ রান (৪টি চার, ৩টি ছক্কা), বিরাট কোহলি ৬৩ বলে ৫৪ রান (৪টি চার) এবং কেএল রাহুল ১০৭ বলে ৬৬ রান (১টি চার) করে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তবে এই রান যথেষ্ট ছিল না।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে মিচেল স্টার্ক ৩/৫৫ নিয়ে সেরা পারফরম্যান্স দেখান। প্যাট কামিন্স ২/৩৪ এবং জশ হ্যাজলউড ২/৬০ নিয়ে দুর্দান্ত সহায়তা করেন। অ্যাডাম জাম্পা এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল একটি করে উইকেট নেন। ভারতীয় বোলাররা শুরুতে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। জসপ্রীত বুমরাহ দুটি এবং মোহাম্মদ শামি একটি উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৭/৩-এ নামিয়ে আনে। কিন্তু এরপর ট্রাভিস হেডের ১২০ বলে ১৩৭ রানের (১৫টি চার, ৪টি ছক্কা) বিধ্বংসী ইনিংস এবং মার্নাস লাবুশেনের ১১০ বলে ৫৮ রানের (৪টি চার) স্থিরতাপূর্ণ খেলা ভারতের স্বপ্ন ভেঙে দেয়। অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয়। ট্রাভিস হেড তাঁর সেঞ্চুরির জন্য ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার পান।
এই ট্রফি, যা অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ের প্রতীক, মেলবোর্নে হোলির উৎসবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভক্তরা এই ট্রফির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে উৎসবের আনন্দে ক্রিকেটের স্মৃতি মিশিয়েছেন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এই উপলক্ষে BBL ও WBBL-এর মার্চেন্ডাইজ বিতরণ করে উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই উদ্যোগ ক্রিকেটের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে যদিও ২০২৩ ফাইনালের পরাজয়ের ক্ষত এখনও তাজা, তবুও তারা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপ তাদের মাল্টিকালচারাল অ্যাকশন প্ল্যানের একটি অংশ। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং ক্রিকেটকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে চায়। ভারতীয় সম্প্রদায়, যারা অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেটের একটি বড় ভক্তবৃন্দ, তাদের জন্য এই উদ্যোগ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। হোলির মতো উৎসবে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে আসা শুধু ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাই নয়, বরং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রকাশ করে।
২০২৩ বিশ্বকাপে ভারত অপরাজিত থেকে ফাইনালে পৌঁছেছিল। ১০টি ম্যাচ জিতে তারা অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছিল। কিন্তু ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে তাদের স্বপ্ন ভেঙে যায়। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা রোহিত, বিরাট ও রাহুলের লড়াইকে মনে রেখেছেন, কিন্তু ট্রাভিস হেডের সেঞ্চুরি তাদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছিল। এই পরাজয় ভারতীয় ক্রিকেটে একটি শিক্ষা হিসেবে রয়ে গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। একজন লিখেছেন, “ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপ হোলিকে আরও বিশেষ করে তুলেছে।” আরেকজন বলেন, “২০২৩ ফাইনালের কথা মনে পড়ে গেল, কিন্তু এই উৎসব ক্রিকেটের আনন্দ ফিরিয়ে এনেছে।” বাংলার এক সমর্থক বলেন, “অস্ট্রেলিয়া জিতলেও আমাদের উৎসবে শরিক হয়েছে, এটাই ক্রিকেটের জয়।”
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই উদ্যোগ ক্রিকেট ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলন ঘটিয়েছে। হোলির রঙে ট্রফির চমক মেলবোর্নে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে, যা ভারতীয় ভক্তদের জন্যও গর্বের বিষয়।