
ভারতীয় ফুটবল দল (Indian Football Team) মার্চ মাসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ম্যাচগুলোর জন্য দলের কোচ মানোলো মার্কেজ বেশ কিছু পরিচিত মুখকে দলে ফিরিয়ে এনেছেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মার্কেজ এখনও প্রথম জয়ের স্বাদ পাননি। তবে এই মার্চে তাঁর দল নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে প্রস্তুত।
১৯ মার্চ মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এই অভিযান। এটি ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের, যারা ‘ব্লু পিলগ্রিমস’ নামে পরিচিত, জন্য দলের পুরনো তারকাদের ফিরে আসা মূল্যায়নের একটি সুযোগ হবে। এরপর ২৫ মার্চ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে মাঠে নামবে ভারত। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জয়ের মুখ দেখেনি ‘ব্লু টাইগার্স’। এই গ্রুপে জয়ী হয়ে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেওয়াই এখন তাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশের পর ভারত হংকং এবং সিঙ্গাপুরের মুখোমুখি হবে, যারা গ্রুপ সি-তে রয়েছে।
কিছু সময়ের বিরতির পর ভারতীয় দলে ফিরে এসেছেন চার অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। এই তারকারা দলের শক্তি বাড়াতে এবং মার্কেজের প্রথম জয়ের স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এই চার খেলোয়াড় হলেন:
৪. শুভাশিস বোস
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার শুভাশিস বোস এই মরশুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) অন্যতম সেরা ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। প্রধানত বাঁ-প্রান্তের ডিফেন্ডার হিসেবে খেললেও, শুভাশিস আক্রমণাত্মক ভূমিকাতেও অবদান রেখেছেন। ২২টি ম্যাচে তিনি ৬টি গোল করেছেন এবং একটি অ্যাসিস্ট দিয়েছেন। তাঁর উঁচুতে বল জয় করার ক্ষমতা এবং ডিফেন্সে দৃঢ়তা ভারতীয় দলের পিছনের সারির জন্য বড় সম্পদ। মার্কেজের জন্য তাঁর ফিরে আসা একটি বড় সুবিধা হবে।
শুভাশিসের অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্বের গুণ এএফসি এশিয়ান কাপ যোগ্যতা পর্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অমূল্য। সেট-পিসে তাঁর হুমকি এবং উইংয়ে উঠে খেলার ক্ষমতা দলকে গভীরতা দেবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
৩. নওরেম মহেশ সিং
ইস্টবেঙ্গল এফসি-র হয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য নওরেম মহেশ সিং জাতীয় দলে ফিরেছেন। ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে তিনি ডিফেন্ডারদের চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা, সুযোগ তৈরি এবং বিপজ্জনক ক্রস দেওয়ার দক্ষতার জন্য পরিচিত। তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম অসাধারণ—গত ৭টি আইএসএল ম্যাচে ২টি গোল এবং একটি অ্যাসিস্ট করেছেন। এটি কোচিং স্টাফের নজর কেড়েছে।
মহেশের অন্তর্ভুক্তি ভারতের আক্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তিনি উইংয়ে বা উন্নত প্লে-মেকিং ভূমিকায় কার্যকরভাবে খেলতে পারেন। তাঁর প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং অদৃশ্য গুণাবলী তাঁকে ‘ব্লু টাইগার্স’-এর জন্য গেম-চেঞ্জার করে তুলতে পারে।
২. আশিক কুরুনিয়ান
দ্রুতগতির এবং চটপটে উইঙ্গার আশিক কুরুনিয়ান জাতীয় দলে ফিরে এসে ভারতের আক্রমণে গতিশীলতা যোগ করেছেন। ২৭ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের হয়ে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে প্রভাব ফেলেছেন। তাঁর গোলের সংখ্যা সতীর্থদের মতো বেশি না হলেও, ডিফেন্ডারদের হারানো এবং বিপজ্জনক ক্রস দেওয়ার ক্ষমতা তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
আশিকের ফ্ল্যাঙ্কে উপস্থিতি ভারতীয় দলের জন্য মুখ্য হবে। তিনি ডিফেন্সকে প্রসারিত করতে এবং সুনীল ছেত্রী ও মনবীর সিংয়ের জন্য আক্রমণে জায়গা তৈরি করতে পারেন। বাংলাদেশের মতো শক্ত ডিফেন্স ভাঙতে তাঁর সতীর্থদের সঙ্গে রসায়ন গুরুত্বপূর্ণ হবে।
১. সুনীল ছেত্রী
ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক, নেতা এবং সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা সুনীল ছেত্রী শীর্ষ ফর্মে জাতীয় দলে ফিরেছেন। ৪০ বছর বয়সেও তিনি প্রত্যাশাকে অস্বীকার করেছেন। এই মরশুমে আইএসএলে তিনি ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২টি গোল করেছেন এবং ২টি অ্যাসিস্ট দিয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, গোলের সামনে শান্ত মাথা এবং নেতৃত্বের গুণ ‘ব্লু টাইগার্স’-এর জন্য তাঁকে অপরিহার্য করে তুলেছে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর যোগ্যতা পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ছেত্রীর বড় মুহূর্তে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। উচ্চ-চাপের পরিস্থিতিতে তিনি দলের ভরসার প্রতীক। তাঁর উপস্থিতি কেবল দলের মনোবলই বাড়াবে।
দলের সম্ভাবনা
মানোলো মার্কেজের অধীনে ভারতীয় দল এখনও জয়ের মুখ দেখেনি। তবে এই চার তারকার ফিরে আসা দলের শক্তি এবং গভীরতা বাড়িয়েছে। শুভাশিসের ডিফেন্সে দৃঢ়তা, মহেশ ও আশিকের আক্রমণে গতি এবং ছেত্রীর নেতৃত্ব দলকে নতুন আশা দিচ্ছে। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচটি এই খেলোয়াড়দের ফর্ম পরীক্ষার জন্য আদর্শ মঞ্চ হবে। এরপর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে যোগ্যতা অর্জন পর্ব শুরু করতে পারলে দলের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা এখন অপেক্ষায় আছেন, এই তারকারা কীভাবে মাঠে প্রভাব ফেলেন এবং দলকে প্রথম জয় এনে দেন। ছেত্রীর নেতৃত্বে ‘ব্লু টাইগার্স’ কি এবার জয়ের খরা কাটাতে পারবে? সময়ই তার উত্তর দেবে।