
ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর প্রয়াত হলেন অস্ট্রেলিয়ার (Australia) প্রাক্তন কিংবদন্তি ক্রিকেটার (Legendary Cricketer) বব কাওপার (Bob Cowper)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। দেশের হয়ে মাত্র চার বছরের টেস্ট কেরিয়ার থাকলেও, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে তাঁর অবদান আজও উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা রয়েছে। এদিন সকালে কাওপারের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে বিশ্ব ক্রিকেট মহল।
প্রয়াত জেল বন্দি প্রাক্তন পাক বিশ্বকাপ জয়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান?
বাঁ-হাতি ব্যাটার হিসেবে বব কাওপার ছিলেন এক অসাধারণ প্রতিভা। টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি ত্রিশতরান করেছিলেন। ১৯৬৫-৬৬ সালের অ্যাশেজ সিরিজে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তাঁর করা ৩০৭ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস অস্ট্রেলিয়াকে অ্যাশেজ ধরে রাখতে সাহায্য করেছিল। প্রায় ১২ ঘণ্টা ক্রিজে থেকে এই ইনিংস খেলেছিলেন তিনি, যা সে সময় ছিল অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর। পরে ২০০৩ সালে ম্যাথু হেডেন জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ৩৮০ রান করে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন।
১৯৬৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যাশেজেই কাওপারের টেস্ট অভিষেক হয়। দেশের হয়ে ২৭টি টেস্ট খেলেছিলেন তিনি, যেখানে ৫টি শতরান ও ৬টি অর্ধশতরান সহযোগে ২০৬১ রান সংগ্রহ করেন। টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৫৩.৭৮, যা যে কোনও যুগে অত্যন্ত সম্মানজনক। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৭৫.৭৮—ডন ব্র্যাডম্যানের (৯৮.২২) পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, অফ-স্পিন বোলিংয়েও দক্ষ ছিলেন কাওপার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ১৮৩টি উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে নিয়েছেন ৩৬টি উইকেট। তাঁর অলরাউন্ড দক্ষতা তাঁকে করে তুলেছিল দলের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
তৈরী হবে নতুন বাগান! নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ সৃঞ্জয়ের
বব কাওপার ভিক্টোরিয়ার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক দশকেরও বেশি সময় খেলেছিলেন। মোট ১৪৭টি ম্যাচে তিনি ১০ হাজারেরও বেশি রান করেন। তাঁর গড় ছিল ৫৩.৭৮, আর শতরান ছিল ২৬টি। এমন পারফরম্যান্সের জোরেই তাঁকে “অ্যাশেজ কিংবদন্তি” বলেও অভিহিত করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
দুর্ভাগ্যবশত, মাত্র ২৮ বছর বয়সেই কাওপার ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। হাতের চোটের কারণে তাঁকে বাইশ গজকে বিদায় জানাতে হয়। তবে অবসরের পরও ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে আইসিসি’র ম্যাচ রেফারির ভূমিকায় কাজ করেছেন, এবং ২০০০ সালে তাঁকে “মেডেল অব দ্য অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া” সম্মানে ভূষিত করা হয়, যা তাঁর ক্রিকেটীয় কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ধরা হয়।
বব কাওপারের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, “উৎকর্ষ স্ট্রোক-প্লে, অসীম ধৈর্য এবং বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা—এই সবকিছু মিলিয়ে কাওপার ছিলেন এক অনন্য প্রতিভা। তাঁর চলে যাওয়ায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত।” অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের চেয়ারম্যান মাইক বার্ড বলেন, “অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে বব কাওপার এক অত্যন্ত সম্মানিত নাম। তাঁর অসাধারণ কৃতিত্ব এবং অবদানের জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”
Today, Australian Cricket is mourning the loss of Bob Cowper OAM.
Bob was an elegant left-handed batter who scored five Test centuries for Australia, including a superb Ashes triple-century at the MCG in 1966.
Our thoughts are with Bob’s family, friends and teammates. pic.twitter.com/Zod0pDRH9T
— Cricket Australia (@CricketAus) May 11, 2025
বব কাওপারের বাবা ডেভ কাওপার ছিলেন একজন রাগবি খেলোয়াড়। খেলাধুলার প্রতি ভালবাসা পরিবার থেকেই পেয়েছিলেন কাওপার। তাঁর মতো একজন ক্রিকেটারকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে তৈরি হলো এক অপূরণীয় শূন্যতা। তাঁর ব্যাটে উঠে আসা সেই ৩০৭ রানের ইনিংস আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে গেঁথে আছে। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই চালিয়ে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন তিনি, কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়ায় তাঁর অবদান এবং কীর্তি আজীবন অমলিন থাকবে। একইসঙ্গে তাঁর স্মৃতি চিরকাল জ্বলজ্বল করবে ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়।