
ভারতীয় ক্রিকেটের (Indian Cricket) অন্যতম মহাতারকা বিরাট কোহলির (Virat Kohli) টেস্ট (Test Cricket) অবসর নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে কোহলি নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা ঘিরে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রাক্তন অধিনায়কের বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে, খুব শীঘ্রই তিনি লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন।
সাক্ষাৎকারে কোহলি বলেছেন, “নিজের কাছে সব সময় সৎ থাকা উচিত। সকলেই জানেন, টেস্ট ক্রিকেট কতটা কঠিন। আপনি যখন বিশ্বের অন্যতম সেরা দলের অংশ, তখন কিছু কিছু কাজ বাধ্য হয়েই করতে হয়, যদিও ইচ্ছে না থাকলেও। এমন সময় আসে, যখন মনে হয়—আবার কি পাঁচ দিন মাঠে নামতে হবে? সেই সময় নিজের সঙ্গে সৎ থাকা অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে।”
কিংবদন্তি ক্রিকেটারের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ক্রীড়াজগৎ
তাঁর এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মানসিক এবং শারীরিক ভাবে টেস্ট ক্রিকেটের চাপ আর নিতে পারছেন না তিনি। তিনি আরও বলেন, “আমি কি সত্যিই প্রস্তুত আরও কয়েকটি কঠিন দিন পার করার জন্য? যখন জানি পরিস্থিতি আমার পক্ষে নয়, সমস্যায় আছি, তখন তৃতীয় দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যাট করতে মন চায় না। তখন নিজেকে প্রশ্ন করি—আমি কি ১০০ বা ১৫০ রান করব দলের জন্য? একটানা দু’দিন পাঁচ-ছ’ঘণ্টা ব্যাট করার ক্ষমতা কি এখনও আছে আমার মধ্যে?”
এই মন্তব্যের পরে অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, বিরাট কোহলি খুব শীঘ্রই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করতে পারেন। যদিও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) এখনও পর্যন্ত তাঁর থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বার্তা পায়নি। তবে বোর্ড ও একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটার, যেমন ব্রায়ান লারা, কোহলিকে অনুরোধ করেছেন এখনও টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার জন্য।
প্রয়াত জেল বন্দি প্রাক্তন পাক বিশ্বকাপ জয়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান?
কোহলি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, তিনি যদি আগামীকালই টেস্ট ক্রিকেট ছেড়ে দেন, তাতেও কোনও আক্ষেপ থাকবে না তাঁর। “যদি আপনি বলেন, কালই টেস্ট ছেড়ে দিন—তাহলেও আমি নির্দ্বিধায় সরে যাব। কারণ, ভারতীয় দলের হয়ে আমি সব সময় দলের কথা ভেবেই খেলেছি। দলের পরিবেশ আরও উন্নত করতে চেয়েছি, কারণ আমি নিজেও সেই পরিবেশের অংশ,” বলেন কোহলি।
তাঁর এই স্বচ্ছ বক্তব্য তরুণদের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে আনছে। তিনি বলেছেন, “আমি চাই না, তরুণ ক্রিকেটারদের মূল্যবান মাস ও বছরগুলো নষ্ট হোক। আমার সময়েও তা হয়েছিল। সফল হতে আমাকে বেশ কিছু সময় লড়তে হয়েছে। তাই চাই, নতুনরা দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিক। যাতে আমরা যখন বিদায় নিই, তখন দলের পুনর্গঠনের জন্য অতিরিক্ত দুই-তিন বছর না লাগে।”
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় কোহলি নাকি একাধিকবার সতীর্থদের সঙ্গে অবসরের প্রসঙ্গ এনেছিলেন। এমনকি নিজের পারফরম্যান্স নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন। লম্বা সময় ধরে প্রত্যাশা মতো খেলতে না পারায় দলের জায়গা আটকে রাখতে তিনি আর আগ্রহী নন বলে জানা যাচ্ছে।
তৈরী হবে নতুন বাগান! নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ সৃঞ্জয়ের
ভারতীয় ক্রিকেটের এক দীর্ঘ অধ্যায়ের নাম বিরাট কোহলি। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দলের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত বিদেশের মাটিতে দাপট দেখিয়েছে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেছে, এবং একটি দুর্দান্ত ফাস্ট বোলিং ইউনিট তৈরি হয়েছে।
তবে এখন সময় পরিবর্তনের। কোহলি হয়তো বুঝতে পারছেন, তরুণদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়াটাই ভবিষ্যতের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত। তবে তাঁর বিদায় যদি সত্যিই ঘনিয়ে আসে, তাহলে তা নিঃসন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য এক যুগের অবসান হবে।