
ভারতীয় ফুটবলের আই-লিগ ২০২৪-২৫ মরসুমের শিরোপা নিয়ে চলমান বিতর্কে কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট (CAS) হস্তক্ষেপ করেছে। ইন্টার কাশি এফসি (Inter Kashi FC), নামধারী এফসি, চার্চিল ব্রাদার্স এসসি এবং অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর মধ্যে এই বিরোধে সিএএস একটি অস্থায়ী আদেশ জারি করেছে, যা চার্চিল ব্রাদার্সকে আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা এবং এআইএফএফ আপিল কমিটির নির্দেশিত পদক বিতরণী অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে। এই সিদ্ধান্ত ইন্টার কাশি এফসি-র জরুরি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে, যারা এই মাসের শুরুতে এআইএফএফ আপিল কমিটির চার্চিল ব্রাদার্সকে বিজয়ী ঘোষণার চূড়ান্ত রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছিল। এই আদেশ সমস্ত পক্ষের জন্য নতুন জটিলতা সৃষ্টি করেছে এবং এখন সিএএস-এর শুনানির ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
Highlights
সিএএস-এর আদেশের বিস্তারিত
২৭ এপ্রিল ২০২৫-এ জারি করা আদেশে, সিএএস-এর আপিল আরবিট্রেশন বিভাগের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ইন্টার কাশি এফসি-র অস্থায়ী ব্যবস্থার আবেদন মঞ্জুর করেছেন। ফলস্বরূপ, এআইএফএফ আপিল কমিটির ১৮ এপ্রিল ২০২৫-এর রায়, যা চার্চিল ব্রাদার্সকে আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নিশ্চিত করেছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, “ইন্টার কাশি এফসি-র দায়ের করা অস্থায়ী ব্যবস্থার আবেদন, মামলা নম্বর সিএএস ২০২৫/এ/১১৩৭৪ ইন্টার কাশি এফসি বনাম এআইএফএফ, চার্চিল ব্রাদার্স এফসি গোয়া এবং নামধারী এফসি, মঞ্জুর করা হয়েছে।” এআইএফএফ-কে এখন ২০২৪-২৫ আই-লিগ মরসুমের বিজয়ী হিসেবে চার্চিল ব্রাদার্সকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা বা পদক বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যতক্ষণ না সিএএস-এর আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, এআইএফএফ, চার্চিল ব্রাদার্স এবং নামধারী এফসি-কে ইন্টার কাশির অস্থায়ী ব্যবস্থার আবেদনের পূর্ণ উত্তর ২৯ এপ্রিল ২০২৫-এর মধ্যে জমা দিতে হবে। অস্থায়ী ব্যবস্থার খরচ চূড়ান্ত রায় বা আরবিট্রেশনের অন্য কোনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সময় নির্ধারণ করা হবে।
বিরোধের পটভূমি
আই-লিগ ২০২৪-২৫ মরসুমের শিরোপা নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ইন্টার কাশি এবং নামধারী এফসি-র মধ্যে ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একটি ম্যাচ। এই ম্যাচে নামধারী ২-০ গোলে জয়ী হয়। কিন্তু ইন্টার কাশি দাবি করে, নামধারী একজন অযোগ্য খেলোয়াড়, ক্লেডসন কার্ভালহো ডি সিলভাকে, যিনি কার্ড জমার কারণে নিষিদ্ধ ছিলেন, মাঠে নামিয়েছিল। এআইএফএফ-এর ডিসিপ্লিনারি কমিটি প্রথমে ইন্টার কাশির পক্ষে রায় দেয়, তাদের ৩-০ গোলে জয় এবং তিনটি পয়েন্ট প্রদান করে, যা তাদের মোট পয়েন্ট ৪২-এ নিয়ে যায়, চার্চিল ব্রাদার্সের ৪০ পয়েন্টের চেয়ে দুই পয়েন্ট বেশি।
কিন্তু নামধারী এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে, এবং ২৭ মার্চ এআইএফএফ আপিল কমিটি ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। ১৮ এপ্রিল ২০২৫-এ, আপিল কমিটি, বিচারপতি (অব.) রাজেশ ট্যান্ডনের নেতৃত্বে, নামধারীর পক্ষে রায় দেয়, মূল ফলাফল বহাল রাখে এবং চার্চিল ব্রাদার্সকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে। এই রায়ের ফলে চার্চিল ব্রাদার্স ৪০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে, ইন্টার কাশি ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় এবং নামধারী ৩২ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে থাকে।
ইন্টার কাশির প্রতিক্রিয়া
ইন্টার কাশি এআইএফএফ আপিল কমিটির রায়কে “প্রক্রিয়াগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ” এবং “অন্যায়” বলে অভিহিত করে সিএএস-এর দ্বারস্থ হয়। ক্লাবটি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ইন্টার কাশি সিএএস-এ একটি সত্যিকারের মুক্ত এবং ন্যায্য শুনানির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এই মামলাটি সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে নিয়ম ও প্রবিধানের একটি সরল ব্যাখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত।” তারা আরও বলেছে, “আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কোনো পাথর অপ্রকাশিত রাখব না।”
ভারতীয় ফুটবলের জন্য প্রভাব
এই নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের ফলে আই-লিগ মরসুম শেষ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেও চ্যাম্পিয়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ২০২৪-২৫ আই-লিগের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা চার্চিল ব্রাদার্সের সমর্থকরা, যারা ‘রেড মেশিন্স’ নামে পরিচিত, সিএএস-এ আইনি লড়াইয়ের কারণে তাদের উৎসব স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে, ইন্টার কাশির জন্য সিএএস-এর এই সিদ্ধান্ত তাদের “ন্যায়বিচার এবং ন্যায্য শুনানির” লড়াইয়ে একটি উল্লেখযোগ্য বিজয়।
এই আরবিট্রেশনের ফলাফল কেবল বর্তমান মরসুমের জন্যই নয়, আগামী মরসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) নতুন দলের অন্তর্ভুক্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। সিএএস-এর হস্তক্ষেপ এআইএফএফ-এর শৃঙ্খলা ও আপিল প্রক্রিয়ার প্রক্রিয়াগত ত্রুটিগুলিকে তুলে ধরেছে। ইন্টার কাশি বারবার এআইএফএফ-এর বিরুদ্ধে বিলম্ব, স্বচ্ছতার অভাব এবং অনিয়মিত যোগাযোগের অভিযোগ তুলেছে, যা ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসনিক কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন উত্থাপন করছে।
জনমত ও সোশ্যাল মিডিয়া
এই বিরোধ ভারতীয় ফুটবল ভক্তদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এক্স-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভক্তদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু ভক্ত চার্চিল ব্রাদার্সের অস্থায়ী শিরোপা উদযাপন করেছেন, আবার অনেকে এআইএফএফ-এর প্রক্রিয়াকে অন্যায় বলে ইন্টার কাশির লড়াইয়ের সমর্থন করেছেন। এক্স-এর পোস্টগুলি ইঙ্গিত দেয় যে ইন্টার কাশির সিএএস-এ আইনি পদক্ষেপকে সাহসী হিসেবে দেখা হচ্ছে, এবং কেউ কেউ অনুমান করছেন যে অনুকূল রায় এআইএফএফ-এর জন্য জরিমানার কারণ হতে পারে। তবে, এই মতামতগুলি অনুমানভিত্তিক এবং বিতর্কের মেরুকৃত প্রকৃতি প্রতিফলিত করে।
সিএএস-এর স্থগিতাদেশ আই-লিগ ২০২৪-২৫ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণে অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত করেছে, ভারতীয় ফুটবলকে সাসপেন্সে রেখেছে। ইন্টার কাশির “মুক্ত এবং ন্যায্য শুনানির” অন্বেষণ তাদের অন্যায় রায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃঢ়তা প্রকাশ করে। এদিকে, চার্চিল ব্রাদার্স এবং তাদের সমর্থকরা স্পষ্টতার অপেক্ষায় রয়েছেন, তাদের আইএসএল প্রমোশনের স্বপ্ন ঝুলে রয়েছে। এই আরবিট্রেশনের ফলাফল ক্লাব, এআইএফএফ এবং ভারতীয় ফুটবল প্রশাসনের ভবিষ্যতের জন্য ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ফুটবল ভক্তরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, এই আইনি লড়াইয়ের সমাধান সাম্প্রতিক স্মৃতিতে সবচেয়ে নাটকীয় আই-লিগ মরসুমের গল্প গঠন করবে।