কেরালার ম্যাচেই খুলবে ডার্বি দরজা! অস্কারের বক্তব্যে উঠল সেই প্রসঙ্গ

গত মরসুমের সাফল্যের স্মৃতি এখনও তরতাজা ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) শিবিরে। সুপার কাপ (Super Cup 2025) জয়ের সেই মুহূর্ত, ফাইনালে ওডিশা এফসিকে ৩-২ গোলে হারানো এবং কলকাতা ডার্বিতে (Kolkata Derby) চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানকে (Mohun Bagan) হারানোর গর্ব—সব কিছুই লাল-হলুদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। ঠিক সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই এ বার নতুন মরসুমে আবার সুপার কাপ অভিযানে নামছে ইস্টবেঙ্গল। এবারের যাত্রা শুরু কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে, যা রবিবার অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচে জয় পেলেই কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ হবে মোহনবাগান, অর্থাৎ অপেক্ষায় আরেকটি হাই-ভোল্টেজ কলকাতা ডার্বি।

ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজো (Oscar Bruzon) এই সম্ভাব্য ডার্বি নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর মতে, এই প্রতিযোগিতা শুধু একটি ট্রফি জয়ের সুযোগই নয়, বরং এশিয়ার মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার দ্বারও খুলে দেয়। তাই সুপার কাপের গুরুত্ব তাঁর কাছে অনেক বড়। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা গত তিন সপ্তাহ ধরে কঠোর পরিশ্রম করছি। আমরা জানি, এই ট্রফি জিতলে ভারতের হয়ে এশিয়ার মঞ্চে খেলার সুযোগ পাওয়া যায়।”

সুপার কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এই লক্ষ্যে মাঠে নামবে ইস্টবেঙ্গল

অস্কারের কথায় বোঝা যাচ্ছে, তিনি শুধু ট্রফির দিকে তাকিয়ে নেই, বরং গোটা দলকে আরও পরিণত ও ধারাবাহিক করে তুলতে চাইছেন। গত মরসুমে চোট-আঘাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে নিয়মিত পাননি তিনি। তবে এ বার সেই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে লাল-হলুদ শিবির। কোচের মতে, “আমার ছেলেরা প্রচুর পরিশ্রম করছে। আমি জানি, এবার আমরা একটা বদল দেখতে পাব। দলের প্রতিটি সদস্য ফর্মে রয়েছে।”

তবে এক দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল—তাদের স্কোয়াডে রয়েছে মাত্র পাঁচজন বিদেশি খেলোয়াড়। ক্লেইটন সিলভা সম্প্রতি ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। অথচ সুপার কাপে একসঙ্গে ছ’জন বিদেশিকে মাঠে নামানোর অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এই ঘাটতি নিয়েও কোনও অজুহাত দিচ্ছেন না স্প্যানিশ কোচ। তিনি জানিয়েছেন, ভারতীয় খেলোয়াড়দের উপর তাঁর ভরসা পূর্ণ। তাঁর কথায়, “বিদেশিরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ভারতীয়রাও তেমনই। আমরা দেশীয় প্রতিভাদের উপরও বিশ্বাস রাখছি।”

কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচ সহজ হবে না, তা জানেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। কেরলেরও গত মরসুম খুব একটা ভালো যায়নি, ফলে তারাও মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে। অস্কারের ভাষায়, “দু’টো দলই নিজেদের সেরাটা দিতে চাইবে। ম্যাচটা টক্করের হবে। তবে আমরা যদি নিজেদের সেরা ফুটবলটা খেলতে পারি, তাহলে পরের সপ্তাহে কলকাতা ডার্বিতে অসাধারণ একটা ম্যাচ দেখতে পাওয়া যাবে।”

গত মরসুমে সুপার কাপ জেতার পর ইস্টবেঙ্গল এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলেছিল। যদিও অল্টিন অসিরের কাছে পরাজয়ের পর এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে হেরে যেতে হয় তাদের। সেই প্রতিযোগিতায় গ্রুপ পর্যায়ে অপরাজিত থাকলেও কোয়ার্টার ফাইনালে আর্কাদাগের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় তারা। এবার সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরতে চাইছে ইস্টবেঙ্গল।

বাড়তি চাপের প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠতেই অস্কার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “চাপ নয়, এটা আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। আমরা যে দলে হেরেছিলাম তারা পরে ফাইনালে উঠেছিল। তাই এখন আমরা আবার সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি। এশিয়ার মঞ্চে ফেরার জন্য আমরা লড়াই করব এবং সব প্রতিযোগিতায় ভালো খেলার চেষ্টা করব।”

সব মিলিয়ে, লাল-হলুদের সামনে বড় সুযোগ। আবার একবার দেশের সেরা ক্লাব হওয়ার হাতছানি। আর সেই পথের শুরুই কেরালার বিরুদ্ধে রবিবারের ম্যাচ দিয়ে। জিতলেই খুলে যাবে ডার্বির দরজা, আর তার সঙ্গেই জেগে উঠবে নতুন মরসুমের স্বপ্ন।

  • Related Posts

    কারা জিতবে ট্রফি? মহারাজের ভবিষ্যদ্বাণী ঘিরে চাঞ্চল্য!

    ভারতীয় ক্রিকেটের (India Former Captain) মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) আবারও একবার আইপিএল (IPL 2025) নিয়ে মুখ খুললেন। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে তাঁর মতামত সবসময়েই অত্যন্ত…

    ISL স্বপ্নভঙ্গ ভুলে সুপার কাপে নতুন টার্গেটে মানোলোর গোয়া

    ব্যান্ডোদকার মেমোরিয়াল ট্রফি জয়, আইএসএল (ISL) শিল্ডের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা এবং বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে চমৎকার পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে এফসি গোয়া’র (FC…