
ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্য বহু প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। যদি কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে, তবে এই তালিকায় বড় কোনো চমক থাকার সম্ভাবনা কম। ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (BCCI ) কিছু প্রতিভাবান ক্রিকেটারের জন্য, যারা সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় চুক্তির মানদণ্ড পূরণ না করলেও, বিশেষ ছাড় দিতে পারে। এই তালিকায় শীর্ষে থাকতে পারেন পাঞ্জাব ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের (এসআরএইচ) বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান অভিষেক শর্মা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তিনি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার, এবং চলমান আইপিএল-এ তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তিনি গ্রেড সি-তে অন্তর্ভুক্ত হবেন, যেখানে বার্ষিক রিটেইনারশিপ হিসেবে ১ কোটি টাকা নিশ্চিত করা হয়।
বিসিসিআই-এর সাধারণ নীতি অনুযায়ী, “যে ক্রীড়াবিদরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ন্যূনতম তিনটি টেস্ট, আটটি ওয়ানডে বা ১০টি টি-টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল (টি২০আই) খেলার মানদণ্ড পূরণ করবেন, তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড সি-তে প্রো-রাটা ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।” অভিষেক নির্দিষ্ট সময়কালে, যা সাধারণত অক্টোবর থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ১২টি টি২০আই খেলেছেন এবং মোট ১৭টি টি২০আই-তে অংশ নিয়েছেন। এই পারফরম্যান্স তাঁকে গ্রেড সি চুক্তির জন্য যোগ্য করে তুলেছে।
২৪ বছর বয়সী অভিষেক ছাড়াও, ২১ বছর বয়সী অন্ধ্রপ্রদেশের অলরাউন্ডার নীতিশ রেড্ডি কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকায় স্থান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় রয়েছেন। তিনি পাঁচটি টেস্ট এবং চারটি টি২০আই খেলেছেন এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক টেস্ট ম্যাচ খেলার কারণে তিনি এই তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য। উল্লেখ্য, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বর্ডার-গাভাস্কর ট্রফি সিরিজের পাঁচটি টেস্ট ম্যাচেই অংশ নিয়েছিলেন।
এছাড়াও, পেসার হর্ষিত রানার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রানা দুটি টেস্ট, পাঁচটি ওয়ানডে এবং একটি টি২০আই খেলেছেন। যদিও তিনি তিনটি ফরম্যাটের কোনোটিতেই পৃথকভাবে নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করেননি, তবে তাঁর মোট খেলার সংখ্যা তাঁকে এই তালিকার জন্য যোগ্য করে তুলেছে। বিসিসিআই তাঁর ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিতে পারে।
এর আগে জানানো হয়েছিল যে সম্প্রতি সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখানো শ্রেয়স আইয়ার এবং বরুণ চক্রবর্তী (চারটি ওয়ানডে এবং ১৮টি টি২০আই) এই তালিকায় স্থান পেতে পারেন। শ্রেয়স আইয়ার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শীর্ষ রান সংগ্রাহক হিসেবে ভারতের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
বিসিসিআই-এর শীর্ষ গ্রেড এ+-এ জসপ্রীত বুমরা, রবীন্দ্র জাদেজা, বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা থাকবেন। তবে, কোহলি, শর্মা এবং জাদেজা টি২০আই থেকে অবসর নেওয়ায় তাঁদের গ্রেড এ-তে নামিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কিছু প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী, তাঁরা এখনও এ+ গ্রেডে থাকবেন, যেখানে বার্ষিক রিটেইনারশিপ ৭ কোটি টাকা। গ্রেড এ-তে ৫ কোটি, গ্রেড বি-তে ৩ কোটি এবং গ্রেড সি-তে ১ কোটি টাকা রিটেইনারশিপ দেওয়া হয়। গ্রেডিং-এ খুব বেশি পরিবর্তন হবে না, সম্ভবত দুই-তিনজন খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় চুক্তি এবং ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফদের পরিবর্তন সংক্রান্ত ঘোষণা প্রকাশিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, এই সিদ্ধান্তগুলি সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন প্রতিভা
অভিষেক শর্মা টি২০আই ফরম্যাটে ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ওপেনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে টি২০আই-এ ওপেনিং করছেন এবং তাঁর ১৯৩.৮৪ স্ট্রাইক রেটে ৫৩৫ রান তাঁর বিস্ফোরক ব্যাটিং ক্ষমতার প্রমাণ। আইপিএল ২০২৫-এ তিনি পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে অপরাজিত শতরান করে এসআরএইচ-কে জয় এনে দিয়েছেন, যা আইপিএল ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর।
নীতিশ রেড্ডি ২০২৪ সালে আইপিএল-এ দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ভারতীয় দলে সুযোগ পান। তিনি অস্ট্রেলিয়া সফরে বর্ডার-গাভাস্কর ট্রফিতে নিজের অলরাউন্ড ক্ষমতা প্রমাণ করেছেন। তাঁর প্রথম টেস্ট শতরান ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
হর্ষিত রানা ভারতীয় বোলিং আক্রমণে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছেন। তিনি চারটি ওয়ানডে-তে ১০ উইকেট, দুটি টেস্টে চার উইকেট এবং একটি টি২০আই-এ তিন উইকেট নিয়েছেন। তাঁর ধারাবাহিকতা এবং সম্ভাবনা বিসিসিআই-এর নজর কেড়েছে।
বিসিসিআই-এর কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অভিষেক শর্মা, নীতিশ রেড্ডি এবং হর্ষিত রানার মতো তরুণ প্রতিভাদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা করবে। শ্রেয়স আইয়ার এবং বরুণ চক্রবর্তীর মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ফিরে আসা দলের শক্তি বাড়াবে। আগামী দিনে এই তালিকা কীভাবে ভারতীয় ক্রিকেটকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়।