মৃতের পরিবারকে ১০ লক্ষ, ভাঙা ঘরের বদলে ‘বাংলার বাড়ি’—মমতার আশ্বাস

কলকাতা: “লড়াইটা শুধু ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে নয়। লড়াইটা সংবিধান বাঁচানোর, লড়াইটা এই দেশের জন্য, মানবিকতার পক্ষে।” নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম জুড়ে মাইক্রোফোনে মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়ল বারবার। পাশে ইমাম, মোয়াজ্জেম, ও একাধিক ধর্মের প্রতিনিধি। ভরা সভায় সাম্প্রতিক হিংসার বিরুদ্ধে ফের একবার কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্বর বদল করে বললেন, “আমি কোনও সম্প্রদায়কে আলাদা করে দেখি না। আমি দেখি মানুষকে। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান—সবাই বাংলার নাগরিক।” আর সেই বাংলায় যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাঁদের পাশে সরকার থাকবে, সে বার্তাও দিলেন স্পষ্ট ভাষায়।

ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি 10 lakhs compensation

গত কয়েকদিনের মুর্শিদাবাদ ও মালদা কেন্দ্রিক হিংসা এবং অশান্তির জেরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এদিন একাধিক ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকার। যাঁদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বাংলার আবাস প্রকল্পে নতুন করে বাড়ি তৈরি করে দেবে সরকার। পাশাপাশি দোকানপাট নষ্ট হওয়া পরিবারগুলির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব দিলেন মুখ্যসচিবকে।

মমতা বলেন, “আমাদের সরকার সব দেখে নেবে। কেউ যাতে অসহায় না থাকেন, সেটা নিশ্চিত করব। মানবিকতার পক্ষে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।”

বিএসএফ-কে নিশানায় তুলে অভিযোগের সুরে মুখ্যমন্ত্রী
সরাসরি কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তোলার পাশাপাশি বিএসএফ-এর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “বিএসএফ গুলি চালিয়েছে, তারও তদন্ত হবে। আমরা চুপ থাকব না। বিএসএফ শীতলকুচিতেও চারজনকে গুলি করে মেরেছিল। এবারও যদি সেই ছবি দেখা যায়, তাহলে কাউকে ছাড়া হবে না।”

তাঁর দাবি, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী সেই সীমানা লঙ্ঘন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

একই আক্রমণ কংগ্রেসের দিকেও 10 lakhs compensation

এদিন শুধু কেন্দ্র নয়, কংগ্রেসকেও রেয়াত করেননি মুখ্যমন্ত্রী। নাম না করেই বলেন, “যাঁরা সংখ্যালঘু ভোটের নামে রাজনীতি করেন, আজ কোথায় তাঁরা? হিংসার সময় কেউ এগিয়ে এল না।” তাঁর বক্তব্য, সংখ্যালঘু সমাজকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে কিছু শক্তি, যা বাংলার মাটিতে বরদাস্ত করা হবে না।

‘বাংলার মাটি বিভাজন চায় না’ 10 lakhs compensation

আবেগ মিশিয়ে মমতা বলেন, “বাংলা হিংসা চায় না। বাংলা বিভাজন চায় না। এখানে সবাই মিলেমিশে থাকে। বাইরে থেকে যারা আগুন জ্বালাতে আসছে, তারা বাংলাকে চেনে না। বাংলার মানুষ এমন নয়।”

নেতাজি ইন্ডোরে দাঁড়িয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী যেন প্রশাসনিক প্রধানের চেয়ে বেশি এক অভিভাবকের ভূমিকায়—যিনি আহত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে আশ্বাস দিচ্ছেন, “তোমরা একা নও।”

 

  • Related Posts

    কারা জিতবে ট্রফি? মহারাজের ভবিষ্যদ্বাণী ঘিরে চাঞ্চল্য!

    ভারতীয় ক্রিকেটের (India Former Captain) মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) আবারও একবার আইপিএল (IPL 2025) নিয়ে মুখ খুললেন। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে তাঁর মতামত সবসময়েই অত্যন্ত…

    ISL স্বপ্নভঙ্গ ভুলে সুপার কাপে নতুন টার্গেটে মানোলোর গোয়া

    ব্যান্ডোদকার মেমোরিয়াল ট্রফি জয়, আইএসএল (ISL) শিল্ডের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা এবং বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে চমৎকার পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে এফসি গোয়া’র (FC…