করুণ নায়ারের বীরত্ব বৃথা! মুম্বই ১২ রানে রোমাঞ্চকর জয় ছিনিয়ে নিল

আইপিএল ২০২৫-এর (IPL 2025) ২৯তম ম্যাচে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে দিল্লি ক্যাপিটালস (Delhi Capitals) এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (Mumbai Indians) মধ্যে এক রোমাঞ্চকর লড়াই দেখা গেল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স প্রথমে ব্যাট করে ২০৫/৫ স্কোর গড়ে, যেখানে তিলক বর্মার গ্রিটি ফিফটি (৩৩ বলে ৫৯) ছিল অন্যতম হাইলাইট। দিল্লির পক্ষে করুণ নায়ারের বিস্ফোরক ৪০ বলে ৮৯ রানের ইনিংস সত্ত্বেও তারা ১৯৩ রানে থামে, মাত্র ১২ রানের জন্য জয় থেকে বঞ্চিত হয়। এই জয়ের মাধ্যমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাদের প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখল, যখন দিল্লি ক্যাপিটালসকে তাদের প্রথম হোম ম্যাচে হতাশা স্বীকার করতে হল।

ম্যাচের শুরু: দিল্লির টস জয় এবং বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত

দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেল টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের পিচ সাধারণত ব্যাটিং-বান্ধব হলেও, দিল্লি তাদের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের উপর ভরসা রাখে। তবে, মুম্বইয়ের ব্যাটিং ইউনিট এদিন তাদের পরিকল্পনাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। মুম্বইয়ের ওপেনার রোহিত শর্মা এবং রায়ান রিকেলটন পাওয়ারপ্লেতে দ্রুত ৪৭ রান যোগ করেন। রোহিত ১৭ রানে আউট হলেও, রিকেলটন ২৫ বলে ৪১ রান করে দলকে শক্ত ভিত দেয়।

তিলক বর্মার ফিফটি এবং মুম্বইয়ের শক্তিশালী স্কোর

মুম্বইয়ের ইনিংসের মূল স্তম্ভ ছিলেন তিলক বর্মা। ৩৩ বলে ৫৯ রানের ইনিংসে তিনি ৬টি চার এবং ৩টি ছক্কা মারেন। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং মুম্বইকে মিডল ওভারে গতি দেয়। সূর্যকুমার যাদবও ২৮ বলে ৪০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন, যেখানে তিনি দুটি ছক্কা হাঁকান। শেষ দিকে নমন ধীরের অপরাজিত ১৭ বলে ৩৮ রান মুম্বইকে ২০০-এর গণ্ডি পার করতে সাহায্য করে। তিলক এবং নমনের ৩৪ বলে ৬২ রানের জুটি ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। দিল্লির বোলারদের মধ্যে কুলদীপ যাদব ছিলেন সবচেয়ে কার্যকর, ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। বিপ্রজ নিগমও ২ উইকেট (৪১ রানে) নেন, তবে মিচেল স্টার্ক এবং মোহিত শর্মা বেশ খরুচে ছিলেন।

দিল্লির তাড়া: করুণ নায়ারের বিস্ফোরক ইনিংস

২০৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি শুরুতেই ধাক্কা খায়। ওপেনার জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক মারেন, দীপক চাহারের বলে আউট হয়ে। তবে, করুণ নায়ার এবং অভিষেক পোরেল দ্রুত ইনিংস গড়তে শুরু করেন। করুণ নায়ার তার আইপিএল ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেন, ৪০ বলে ৮৯ রান। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার এবং ৪টি ছক্কা। মাত্র ২২ বলে তিনি ফিফটি পূর্ণ করেন, যা দিল্লির সমর্থকদের জয়ের আশা জাগায়। অভিষেক পোরেল ৩৩ রান করে তাকে ভালো সঙ্গ দেন। ১০.২ ওভারে দিল্লির স্কোর ছিল ১১৯/১, তখন মনে হচ্ছিল তারা সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।

মুম্বইয়ের ফিরে আসা: কর্ণ শর্মা এবং স্যান্টনারের ম্যাজিক

দিল্লির স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মুম্বইয়ের স্পিনাররা। মিচেল স্যান্টনার ১১.৪ ওভারে করুণ নায়ারকে বোল্ড করে দিল্লির ইনিংসে ধস নামান। নায়ারের উইকেটের পর দিল্লির ব্যাটিং লাইনআপ দ্রুত ভেঙে পড়ে। অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেল ৯ রানে জসপ্রীত বুমরাহর শিকার হন, এবং ট্রিস্টান স্টাবসও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। কর্ণ শর্মা এদিন তার স্পিনের জাদু দেখান, কেএল রাহুল-সহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। শেষ ওভারে দিল্লির প্রয়োজন ছিল ১৩ রান, কিন্তু মুম্বইয়ের বোলাররা শান্ত থেকে ম্যাচটি তাদের দিকে টেনে নেন। দিল্লি ১৯৩ রানে থামে, মাত্র ১২ রানের জন্য জয় অধরা থেকে যায়।

ম্যাচের হাইলাইট এবং খেলোয়াড়দের অবদান

মুম্বইয়ের জয়ের পিছনে তিলক বর্মার স্থিতধী ব্যাটিং এবং নমন ধীরের ফিনিশিং ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বোলিংয়ে কর্ণ শর্মার ৩ উইকেট এবং স্যান্টনারের গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করে। জসপ্রীত বুমরাহও তার অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে মিডল ওভারে দিল্লির রানের গতি কমিয়ে দেন। দিল্লির পক্ষে করুণ নায়ারের ইনিংস ছিল দলের একমাত্র আশার আলো। তবে, তার আউট হওয়ার পর দিল্লির ব্যাটিং ইউনিট মুম্বইয়ের চাপের মুখে ভেঙে পড়ে। কুলদীপ যাদবের বোলিং প্রশংসনীয় ছিল, তবে মিচেল স্টার্কের ৩ ওভারে ৪৩ রান খরচ মুম্বইকে বড় স্কোর গড়তে সাহায্য করে।

ম্যাচের পরিসংখ্যান এবং প্রভাব

  • মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: ২০৫/৫ (২০ ওভার)
    তিলক বর্মা: ৫৯ (৩৩ বল, ৬ চার, ৩ ছক্কা)
  • নমন ধীর: ৩৮* (১৭ বল)
  • সূর্যকুমার যাদব: ৪০ (২৮ বল)
  • কুলদীপ যাদব: ৪-০-২৩-২
  • দিল্লি ক্যাপিটালস: ১৯৩/৯ (২০ ওভার)
    করুণ নায়ার: ৮৯ (৪০ বল, ৮ চার, ৪ ছক্কা)
  • অভিষেক পোরেল: ৩৩ (২৩ বল)
  • কর্ণ শর্মা: ৩ উইকেট

এই হারের ফলে দিল্লি ক্যাপিটালসের অপরাজিত রেকর্ডে ধাক্কা লাগল। তারা এখনও পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকলেও, এই ম্যাচ তাদের মিডল অর্ডারের দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জন্য এই জয় তাদের প্লে-অফের সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করেছে। হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বে দলটি এই ম্যাচে ঐক্যবদ্ধ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।

এই ম্যাচ ছিল আইপিএল ২০২৫-এর অন্যতম রোমাঞ্চকর লড়াই। করুণ নায়ারের বীরত্ব সত্ত্বেও দিল্লি ক্যাপিটালস শেষ মুহূর্তে হোঁচট খায়, আর মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাদের অভিজ্ঞতা এবং কৌশলের জোরে জয় ছিনিয়ে নেয়। দিল্লির পরবর্তী ম্যাচে তারা এই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিরতে চাইবে, যখন মুম্বই এই গতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করবে। আইপিএলের এই মরশুমে প্রতিটি ম্যাচই নতুন নাটকীয়তা নিয়ে আসছে, এবং এই ম্যাচ তার ব্যতিক্রম ছিল না।

  • Related Posts

    কারা জিতবে ট্রফি? মহারাজের ভবিষ্যদ্বাণী ঘিরে চাঞ্চল্য!

    ভারতীয় ক্রিকেটের (India Former Captain) মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) আবারও একবার আইপিএল (IPL 2025) নিয়ে মুখ খুললেন। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে তাঁর মতামত সবসময়েই অত্যন্ত…

    ISL স্বপ্নভঙ্গ ভুলে সুপার কাপে নতুন টার্গেটে মানোলোর গোয়া

    ব্যান্ডোদকার মেমোরিয়াল ট্রফি জয়, আইএসএল (ISL) শিল্ডের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা এবং বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে চমৎকার পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে এফসি গোয়া’র (FC…