Irfan Yadwad: ওয়েন কয়েলের হাত ধরে চেন্নাইয়িনের নয়া তারকা ইরফানের উত্থান

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ২০২৪-২৫ মরশুমে চেন্নাইয়িন এফসি-র পারফরম্যান্স সন্তোষজনক না হলেও, দলের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে উঠে এসেছেন ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ইরফান ইয়াদওয়াদ (Irfan Yadwad)। ২৪টি লিগ ম্যাচে পাঁচটি গোল এবং চারটি অ্যাসিস্ট করে তিনি নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ওয়েন কয়েলের অধীনে সব ম্যাচে শুরু থেকে মাঠে নেমে ইরফান দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন। তাঁর এই ফর্ম এবং পুরো মাঠ জুড়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য গত বছর ভারতীয় জাতীয় দলের কোচ মানোলো মার্কেজ তাঁকে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেকের সুযোগ দেন। সম্প্রতি ‘খেল নাও’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইরফান তাঁর ফুটবল যাত্রার গল্প শেয়ার করেছেন।

ফুটবল পাগল পরিবার থেকে উত্থান
ইরফান ইয়াদওয়াদ এমন একটি পরিবার থেকে এসেছেন, যেখানে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা রক্তে মিশে আছে। তিনি জানান, তাঁর বাবা ছিলেন তাঁর প্রথম প্রেরণা। প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে তাঁর বাবা স্থানীয় এবং গ্রামের টুর্নামেন্টে খেলতেন। ইরফান বলেন, “প্রথমত, আমার বাবা। তিনি স্থানীয় টুর্নামেন্টে খেলতেন। আমি প্রতিদিন তাঁকে খেলতে দেখতে যেতাম। দ্বিতীয়ত, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো।” ছোটবেলা থেকেই বাবার খেলা দেখে ফুটবলের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায়।

রোনাল্ডোর ভক্ত ইরফান
চেন্নাইয়িন এফসি-র এই তারকা এই মরশুমে বেশিরভাগ গোলের পর ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর বিখ্যাত ‘সিউউউউ’ সেলিব্রেশন করেছেন। তিনি জানান, “আমি সবসময় ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে সমর্থন করি। তিনি যেখানেই যান, আমি তাঁকে সমর্থন করব, তবে কোনও নির্দিষ্ট ক্লাব নয়।” ভারতীয় ফুটবলের ক্ষেত্রে তিনি বেঙ্গালুরু এফসি এবং কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রীকে আদর্শ হিসেবে দেখেন।

Also Read | ISL 2025: জমজমাটি শেষ ম্যাচ সপ্তাহে দেখে নিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত  

আইএসএল ও নিম্ন লিগের পার্থক্য
ইরফানের ফুটবল যাত্রা শুরু হয় গোয়ার যুব লিগে। পরে তিনি আই-লিগ ২-এ বেঙ্গালুরু ইউনাইটেডের হয়ে খেলেন। আইএসএল ও নিম্ন লিগের পার্থক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “আইএসএল-এ প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। একটি ভালো প্রশিক্ষণ বা একটি ভালো ম্যাচে কাউকে সন্তুষ্ট করা যায় না। প্রতিদিন প্রশিক্ষণে এবং ম্যাচে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয়। এটি একটি বড় লিগ, তাই প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম, মনোযোগ এবং ধারাবাহিকতা দরকার।”

ওয়েন কয়েলের প্রভাব
ইরফান চেন্নাইয়িনে দুটি মরশুম ওয়েন কয়েলের অধীনে খেলেছেন। কোচের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, “তিনি আমার জন্য খুব ভালো ছিলেন। গত মরশুমে আমি ১৭টি ম্যাচ খেলেছি, যা আমার প্রথম মরশুমের জন্য ভালো ছিল। এই মরশুমে তিনি প্রথম দিন থেকেই আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর অধীনে খেলতে অনুপ্রাণিত হয়েছি।” কয়েলের সমর্থন সম্পর্কে তিনি যোগ করেন, “প্রথম ছয় ম্যাচে আমি গোল করতে পারিনি। কিন্তু তিনি আমাকে বলতেন, গোল নিয়ে চিন্তা না করে আমি যা করছি, তা চালিয়ে যেতে। আমার কাজ এবং শক্তি তিনি পছন্দ করতেন। এটি আমাকে প্রতি ম্যাচে সেরাটা দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে।”

কয়েলের অধীনে উন্নতি
ইরফান মনে করেন, কয়েলের অধীনে তাঁর খেলা অনেক উন্নত হয়েছে। তিনি বলেন, “গত মরশুমে আমি ফিনিশিং এবং গোল করতে পিছিয়ে ছিলাম। এই মরশুমে তিনি প্রথম দিন থেকে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রতিদিন প্রশিক্ষণে ফিনিশিং নিয়ে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমি ম্যাচে ভালো করার জন্য প্রশিক্ষণে কঠোর পরিশ্রম করি।” চেন্নাইয়িনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “দুটি মরশুমেই দল, স্টাফ এবং কোচদের সঙ্গে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি চেন্নাইয়িনে উপভোগ করছি।”

জাতীয় দলের অভিষেক ও মানোলো মার্কেজ
গত বছর মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ইরফান ভারতীয় জাতীয় দলে অভিষেক করেন। তিনি বলেন, “এটি একটি দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। কোচ মানোলো মার্কেজের অধীনে আমার প্রথম ম্যাচ। আকাশ সাংওয়ান ভাই এবং ফারুখ ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।” মার্কেজের পরামর্শ সম্পর্কে তিনি বলেন, “ম্যাচের আগের দিন আমি মনোযোগ হারিয়েছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘নার্ভাস?’ আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, নার্ভাস হওয়া স্বাভাবিক। মাঠে নামলে চিন্তা না করে সেরাটা দিতে। আমি অভিষেকে তাই করার চেষ্টা করেছি।”

প্রিয় পজিশন
স্ট্রাইকার হিসেবে কেরিয়ার শুরু করলেও ইরফান এখন সামনের তিনটি পজিশনেই খেলতে পারেন। তিনি বলেন, “এখন আমার কোনও নির্দিষ্ট পজিশন পছন্দ নেই। আমি শুধু খেলতে চাই—স্ট্রাইকার বা উইঙ্গার যাই হোক।”

ভারতের পরবর্তী স্ট্রাইকার?
সুনীল ছেত্রী অবসর থেকে ফিরলেও, ভারতীয় ফুটবলে নতুন স্ট্রাইকারের খোঁজ চলছে। ইরফান কি নিজেকে সেই ভূমিকায় দেখেন? তিনি বলেন, “আমি নিজের উপর ভরসা রাখি। আমি সেরা হতে পারি। ক্লাবে যা করছি, জাতীয় দলেও তাই করতে চাই। কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাব।”

ফারুখ চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক
ইরফান এবং ফারুখ চৌধুরী চেন্নাইয়িন থেকে জাতীয় দলে গেছেন। ফারুখ সম্পর্কে তিনি বলেন, “তিনি আমার সঙ্গে খুব ভালো। গত মরশুম এবং এই মরশুমে তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন। জাতীয় দলে আমার অভিষেকের আগে আমি নার্ভাস ছিলাম। ফারুখ ভাই প্রতি মুহূর্তে আমাকে সাহায্য করেছেন।” ফারুখ তাঁর খেলার উন্নতি এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ভাইয়ের মতো ভূমিকা পালন করেছেন।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য
ইরফানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আমার প্রথম লক্ষ্য চেন্নাইয়িনে শিরোপা জেতা। দ্বিতীয়ত, আমার বাবা-মাকে গর্বিত করা। আমার পরিবারের প্রত্যাশা অনেক। আমি তাদের কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই।” ইরফানের মতো তরুণ তারকার উপর ভরসা রেখে চেন্নাইয়িন ভবিষ্যতে শিরোপার দৌড়ে ফিরতে চায়।

ইরফান ইয়াদওয়াদ চেন্নাইয়িন এফসি-র একটি আশার আলো। ওয়েন কয়েলের সমর্থনে তিনি উন্নতি করছেন এবং জাতীয় দলেও নিজের ছাপ রাখছেন। সমর্থকরা অপেক্ষায় রয়েছেন, তিনি কীভাবে ক্লাব এবং দেশের জন্য আরও বড় সাফল্য এনে দেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করছে।

 

  • Related Posts

    Subhasish Bose Holi celebration: হোলির আমেজে বাগান অধিনায়ক, নেটমাধ্যমে বিশেষ পোস্ট

    বিগত ফুটবল মরসুমের মতো এবার ও দুরন্ত ছন্দে রয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। শক্তিশালী মুম্বাই সিটি এফসির বিপক্ষে শুরুটা খুব একটা ভালো না হলেও সেখান থেকে…

    Sangita Basfore: জাতীয় দলের অভিজ্ঞ বাঙালি মিডফিল্ডার সঙ্গীতা মশালবাহিনীতে

    জাতীয় দলের (Indian National Football Team) অভিজ্ঞ বাঙালি মিডফিল্ডার সঙ্গীতা বাসফোর (Sangita Basfore) ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে (East Bengali FC) যোগ দিয়েছেন। ইন্ডিয়ান ওমেন্স লীগের পরবর্তী অংশ…