East Bengal FC: তুর্কমেনিস্তানে ইস্টবেঙ্গলের দুঃস্বপ্ন! এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের আগে দলের কঠিন পরিস্থিতি

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এফসি’র (East Bengal FC) এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের জন্য তুর্কমেনিস্তান সফর একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এফকে আরকাদাগের বিরুদ্ধে বুধবারের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দলটি চরম বিধিনিষেধ, দুর্বিসহ জীবনযাপনের পরিস্থিতি এবং মৌলিক সুবিধার অভাবের মধ্যে পড়েছে। অভিযাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দলের খেলোয়াড় এবং স্টাফদের ওপর যে অভূতপূর্ব চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা তাদের প্রস্তুতিকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করেছে।

ইমিগ্রেশনের ঝামেলা থেকে শুরু করে চলাফেরা ও যোগাযোগের কঠোর সীমাবদ্ধতা—ইস্টবেঙ্গল দল এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, যা তাদের জন্য অকল্পনীয়। এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র দলের মনোবলের ওপর প্রভাব ফেলেনি, বরং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অতিথি দলের প্রতি আচরণ নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

আশখাবাতে আগমনেই বিপত্তি
ইস্টবেঙ্গলের দুঃসাহসিক অভিযান শুরু হয় রবিবার ভোরে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে। দীর্ঘ ভ্রমণের পর ক্লান্ত দলটি সঠিক ভ্রমণ নথি থাকা সত্ত্বেও বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকে থাকে। বিমানবন্দর কর্মকর্তারা কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে এই আটক রাখেন, যা দলের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়। এই দীর্ঘ অপেক্ষা খেলোয়াড়দের ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে দেয়।

ইমিগ্রেশন থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দলকে আরকাদাগ শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই শহরটি তুর্কমেনিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বিশেষ এলাকা, যেখানে কঠোর নজরদারি, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি সর্বত্র। এই পরিবেশে ইস্টবেঙ্গল দল স্পষ্টতই বুঝতে পারে যে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজর রাখা হবে।

হোটেলে কঠোর বিধিনিষেধ ও অতিথিপরায়ণতার অভাব
নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছানোর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। কর্তৃপক্ষ দলের সবার পাসপোর্ট জব্দ করে নেয় এবং স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় যে আরকাদাগের কোনো অফিসিয়াল এসকর্ট ছাড়া তারা হোটেলের বাইরে পা রাখতে পারবে না। এই পদক্ষেপ দলকে কার্যত গৃহবন্দি করে দেয়। দীর্ঘ ভ্রমণের পর খোলা বাতাসে একটু শ্বাস নেওয়ারও সুযোগ তারা পায়নি।

খাবারের ব্যবস্থাও ছিল হতাশাজনক। আগে থেকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও খেলোয়াড়দের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া হয়নি। মাংস বা ডিমের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এছাড়া, টুথপেস্ট বা টুথব্রাশের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসও সরবরাহ করা হয়নি। খেলোয়াড়দের নিজেদের ব্যাগে যা ছিল, তাই দিয়ে কোনোরকমে কাজ চালাতে হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ছিল পানির গুণগত মান—কল থেকে দৃশ্যত দূষিত পানি বেরোচ্ছিল, যা খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা
বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগও দলের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোটেলের ইন্টারনেট পরিষেবা অত্যন্ত ধীরগতির, যার ফলে খেলোয়াড়রা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা বাইরের খবর জানতে পারছেন না। সোশ্যাল মিডিয়া সম্পূর্ণভাবে ব্লক করা হয়েছে, ফলে কোনো ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুযোগও নেই। পুরো দলের জন্য মাত্র চারটি স্থানীয় সিম কার্ড দেওয়া হয়েছে, যা তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগকে আরও সীমিত করে দিয়েছে।

অনুশীলনের বাধা ও মাঠের খারাপ অবস্থা
ম্যাচের জন্য প্রস্তুতিতেও ইস্টবেঙ্গল বাধার মুখে পড়েছে। নির্ধারিত অনুশীলন সেশনের জন্য পরিবহন প্রায় এক ঘণ্টা দেরি করে পৌঁছায়। স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে একটি রহস্যময় গাড়ি দলের বাসের পিছু নেয়, যা দলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। অনুশীলন মাঠে পৌঁছে আরেকটি হতাশা অপেক্ষা করছিল—মাঠের অবস্থা এতটাই খারাপ যে অসাবধানী আঘাতের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এছাড়া, কঠোর নিয়মের কারণে ছবি তোলা বা সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কোনো ডকুমেন্টেশন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে ম্যাচের প্রচার বা প্রমাণ সংরক্ষণেরও সুযোগ নেই।

প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই
তুর্কমেনিস্তানে ইস্টবেঙ্গলের অভিজ্ঞতা একটি দুঃস্বপ্নের চেয়ে কম নয়। চলাফেরার সীমাবদ্ধতা, সঠিক খাবারের অভাব, যোগাযোগের সংকট এবং খারাপ অনুশীলন পরিস্থিতি—এই সবকিছুই দলের জন্য এই সফরকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অ্যাওয়ে ট্রিপে পরিণত করেছে। প্রথম লেগে এফকে আরকাদাগের কাছে ০-১ গোলে হেরে ইতিমধ্যেই পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলের এই পরিস্থিতি তাদের প্রস্তুতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

এই অভিজ্ঞতা শুধু দলের খেলার ওপর প্রভাব ফেলেনি, বরং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অতিথি দলের প্রতি এমন আচরণ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। ব্রুজনের ছেলেরা এখন শুধু মাঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করবে না, এই প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গেও তাদের লড়তে হবে।

সমর্থকদের প্রত্যাশা ও উদ্বেগ
ইস্টবেঙ্গলের লাল-হলুদ সমর্থকদের কাছে এই খবর অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাদের প্রিয় দল যে এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা তাদের মনে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি করেছে। তবে, দলের খেলোয়াড়দের প্রতি তাদের ভরসা অটুট। তারা আশা করছেন, এই প্রতিকূলতার মধ্যেও ইস্টবেঙ্গল শক্তি সঞ্চয় করে মাঠে নিজেদের সেরাটা দেবে।

এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে এফকে আরকাদাগের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য ইস্টবেঙ্গল এফসি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। এই কঠিন পরিবেশে তাদের মানসিক ও শারীরিক শক্তি পরীক্ষা করা হবে। কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা দূর থেকে দলের জন্য প্রার্থনা করছেন, যাতে তারা এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে ঘরে জয় নিয়ে ফিরতে পারে। ইস্টবেঙ্গলের এই লড়াই শুধু মাঠের খেলার জন্য নয়, বরং তাদের অদম্য চেতনার প্রমাণ দেওয়ার জন্যও।

Related Posts

অনবদ্য সৌম্যা! এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ওমেন্স লিগ জয় লাল-হলুদের

লিগের রঙ লাল-হলুদ। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী শুক্রবার বিকেলে কল্যাণী স্টেডিয়ামে জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলতে নেমেছিল অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুজের মেয়েরা (East Bengal Women’s Team)। সম্পূর্ণ সময়ের…

বেঙ্গালুরুর সামনে মোহনবাগানের শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ

Kolkata, ১১ এপ্রিল ২০২৫: ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত এসে পৌঁছেছে। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার বিখ্যাত সল্টলেক স্টেডিয়ামে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL 2025) ২০২৪-২৫ মরশুমের ফাইনালে…