Goal Machine Sunil Chhetri: মালদ্বীপের কাছে সুনীল ছেত্রী ভারতের গোলের মেশিন

ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri) আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্লু টাইগার্সের জন্য বড় ম্যাচের নায়ক হিসেবে বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে ভারতের জন্য গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, তিনি বিশেষ করে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি করেছেন। ‘রেড স্ন্যাপার্স’ নামে পরিচিত মালদ্বীপের ফুটবল দল বারবার ছেত্রীর দক্ষতার শিকার হয়েছে। ৪০ বছর বয়সেও এই তারকা স্ট্রাইকার এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং নেহরু কাপের বিভিন্ন সংস্করণে মালদ্বীপের জালে গোল করে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখেছেন। আগামী ১৯ মার্চ ২০২৫-এ (বুধবার) মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে তিনি আবারও মাঠে নামবেন, যা ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

২০১১ এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে জোড়া গোল
সুনীল ছেত্রীর মালদ্বীপের বিরুদ্ধে প্রথম উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স এসেছিল ২০১১ সালের এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে। এই ম্যাচে তিনি দুটি গোল করে ভারতকে জয় এনে দেন। ১-১ সমতায় থাকা ম্যাচে ৭০ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন তিনি, পেনাল্টি থেকে ভারতকে ২-১ এগিয়ে দিয়ে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে, ৯১ মিনিটে আরেকটি পেনাল্টি গোলে জয় নিশ্চিত করেন ছেত্রী। জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা এই গোলে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। তাঁর এই নৈপুণ্যে ভারত ষষ্ঠবারের মতো এসএএফএফ শিরোপা জিতে নেয়।

২০১২ নেহরু কাপে আরও দুটি গোল
পরের বছর, ২০১২ সালের নেহরু কাপে ছেত্রী মালদ্বীপের রক্ষণভাগকে আবারও বিপর্যস্ত করেন। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে (৪৫+২ মিনিট) পেনাল্টি থেকে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেন। এরপর ৭০ মিনিটে হেডার থেকে আরেকটি গোল করে দলকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যান। এই ম্যাচে তাঁর দুটি গোল ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টুর্নামেন্টের ফাইনালে সমতা ফিরিয়ে আনা এবং পেনাল্টি শুটআউটে গোল করে তিনি ভারতকে ৫-৪ ব্যবধানে জয় এনে দেন, যা তাঁর চাপের মুহূর্তে গোল করার ক্ষমতার প্রমাণ দেয়।

২০১৫ এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রেরণাদায়ী গোল
২০১৫ সালের এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে ছেত্রী মালদ্বীপের বিরুদ্ধে আবারও গোলের দেখা পান। ২৫ মিনিটে হালিচরণ নার্জারির অ্যাসিস্টে পেনাল্টি থেকে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেন। যদিও এই ম্যাচে তিনি দ্বিতীয় গোল করতে পারেননি, তাঁর প্রাথমিক গোল ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে। জেজে লালপেখলুয়ার জোড়া গোলের সৌজন্যে ভারত ৩-২ গোলে জয়ী হয় এবং সপ্তমবার শিরোপা জিতে। এই টুর্নামেন্টে ছেত্রী এমভিপি পুরস্কার জিতে নিজের নেতৃত্বের প্রমাণ দেন।

২০২১ এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে ক্লাসিক পারফরম্যান্স
এমনকি প্রথম জোড়া গোলের এক দশক পরেও, ২০২১ সালের এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে ছেত্রী তাঁর অসাধারণ ফর্ম অব্যাহত রাখেন। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৬২ মিনিটে মানবীর সিংয়ের পাস থেকে রাইট ফুটেড ভলি করে গোল করেন, ভারতকে ২-১ এগিয়ে দিয়ে। এরপর ৭১ মিনিটে প্রীতম কোটালের ক্রস থেকে হেডারে আরেকটি গোল করে ম্যাচে দলের জয় নিশ্চিত করেন। এই পারফরম্যান্স তাঁকে টুর্নামেন্টের চতুর্থ গোল এবং আরেকটি এমভিপি পুরস্কার এনে দেয়। ভারত অষ্টমবার এসএএফএফ শিরোপা জিতে নেয়।

মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ছেত্রীর রেকর্ড
বেঙ্গালুরু এফসি’র এই স্ট্রাইকার মালদ্বীপের বিরুদ্ধে মোট ৭টি গোল করেছেন, যা চারটি ভিন্ন টুর্নামেন্টে এসেছে। এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপে তিন ম্যাচে ৫ গোল এবং নেহরু কাপে এক ম্যাচে ২ গোল—এই পরিসংখ্যান তাঁর ধারাবাহিকতা এবং দক্ষতার প্রতীক। তাঁর গোলের তালিকা এই রকম:
২০১১ এসএএফএফ: ২ গোল (দুটিই পেনাল্টি)
২০১২ নেহরু কাপ: ২ গোল (পেনাল্টি ও হেডার)
২০১৫ এসএএফএফ: ১ গোল (পেনাল্টি)
২০২১ এসএএফএফ: ২ গোল (ভলি ও হেডার)

ভারতীয় ফুটবলের আইকন
চাপের মুহূর্তে গোল করার অসাধারণ ক্ষমতা ছেত্রীকে ভারতীয় ফুটবলের অনন্য আইকনে পরিণত করেছে। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে তাঁর পারফরম্যান্স তাঁর মহানত্বের সাক্ষ্য বহন করে। ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

আগামী প্রীতি ম্যাচে প্রত্যাশা
আগামী ১৯ মার্চ মালদ্বীপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ছেত্রী আবারও মাঠে নামবেন। ২৭৩ দিন পর জাতীয় দলে ফিরে তিনি কী ধরনের পারফরম্যান্স দেখাবেন, তা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ম্যাচে তিনি আবারও নিজের জাত চিনিয়ে মালদ্বীপের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়াতে পারেন। ভাইচুং ভুটিয়া সম্প্রতি বলেছেন, “সময়ই বলবে ছেত্রী কী করতে পারেন।” তবে তাঁর ইতিহাস বিচার করলে, এই ম্যাচে আরেকটি গোলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ছেত্রীর উত্তরাধিকার
সুনীল ছেত্রী শুধু একজন গোলদাতা নন, তিনি ভারতীয় ফুটবলের প্রতীক। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে তাঁর ৭ গোল এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দলকে জয় এনে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। এই প্রীতি ম্যাচের মাধ্যমে তিনি আরও একবার ভারতীয় ফুটবলের গর্ব হিসেবে মাঠে নামবেন। তাঁর এই যাত্রা ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Related Posts

East Bengal vs Arkadag: সোম থেকেই আরকাদাগ ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইস্টবেঙ্গল, আসবে জয়?

এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের শুরুটা খুব একটা ভালো ছিল না ইমামি ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal)। প্রথম ম্যাচে পারো এফসির সঙ্গে অমীমাংসিত ফলাফলে ম্যাচ শেষ করায় যথেষ্ট হতাশা…

East Bengal FC: তুর্কমেনিস্তানে ইস্টবেঙ্গলের দুঃস্বপ্ন! এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের আগে দলের কঠিন পরিস্থিতি

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এফসি’র (Turkmenistan) এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের জন্য তুর্কমেনিস্তান সফর একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এফকে আরকাদাগের বিরুদ্ধে…